‘১৯৪০ সালের পর বাংলাদেশে আবাসিক নীলগাই দেখে গেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। অনিয়ন্ত্রিত শিকার, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবসহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রাণীটি অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে’
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে একটি বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই (গরু) আটক করেছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া শালডাঙ্গা এলাকায় পথচারীরা বিরল প্রজাতির নীলগাইটি দেখতে পান। পরে তারা সেটিকে আটক করে নাক ও গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন।
খবর পেয়ে বালয়িাডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও স্থানীয় কান্তিভিটা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। পরে বিজিবি সদস্যরা নীলগাইটি নিজেদের হেফাজতে নেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মজিদ বলেন, “দ্রুতগতিতে আসা নীলগাইটিকে কয়েকজন মিলে আটক করে পা বেঁধে রাখে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বিজিবির কাছে হস্তাস্তর করা হয়।”
আরও পড়ুন - সুন্দরবনে হঠাৎ হরিণ শিকারের মহোৎসব
পাড়িয়া শালডাঙ্গা এলাকার শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ এলাকার ধানক্ষেতগুলোতে কয়েকদিন ধরেই একটা রহস্যজনক প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তাতে করে ধারণা করা যায়, কয়েকদিন ধরে এই নীল গাইটি নিকটবর্তী জঙ্গলে অবস্থান করছিল। সীমান্তবর্তী নাগর নদী পাড় হয়ে এটি ভারত থেকে এদেশে আসতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুষার চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয়রা অনেকেই প্রাণীটিকে মারধর করেছে। এতে প্রাণীটি মারাত্মক আহত হয়েছে। বিজিবি উদ্ধারের সময় এটির গলা থেকে রক্ত ঝরছিল।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ বলেন, “বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পারিয়া শালডাঙ্গা এলাকায় উদ্ধারের কথা শুনেছি। বর্তমানে স্থানীয় বিজিবির কাছে রয়েছে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নীলগাইটির যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। দিনাজপুর উদ্যানে নীলগাইটিকে নিয়ে যাওয়া হবে।”
আরও পড়ুন - টাঙ্গুয়ার হাওরে নির্বিচারে মৎস্য নিধন ও বন উজার
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঘোড়া সদৃশ নীলগাই প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী। এক সময় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকার বনে প্রাণীটির দেখা মিলত। তবে ১৯৪০ সালের পর বাংলাদেশে আবাসিক নীলগাই দেখা গেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। অনিয়ন্ত্রিত শিকার, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবসহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রাণীটি অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাণীটি সাধারণত দলবেঁধে থাকে। তবে গত কয়েকবছর ধরে মাঝেমধ্যে যে কয়েকটি নীলগাই উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত ভারত থেকে আসা। বর্তমানে ভারত ছাড়াও পাকিস্তান ও নেপালে নীলগাইয়ের বসবাস রয়েছে। তবে তার সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।”
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবঞ্জের শিবগঞ্জে ভারত থেকে নদী পথে একটি নীলগাই ভেসে আসে। এর আগেও ২০১৯ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করা হয়। তার আগের বছর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা থেকে আরও একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন - পাখির বিষ্ঠা গায়ে পড়ায়...
আরও পড়ুন - কুমির ভেবে আটকে রাখা হয়েছিল ‘মহাবিপন্ন’ ঘড়িয়াল
আরও পড়ুন - বনের পথে দ্রুতগতির গাড়ি, প্রাণ গেল ‘বিপন্ন’ বাঘডাশের
মতামত দিন