হাই কমিশনার বলেন, 'পাকিস্তানি বাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছে তার বিচারের উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার যেকোনো সময়ই শুরু করতে পারে'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তিতে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২৬ মার্চ ঢাকা সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী জানিয়েছেন, ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাথে মিল রেখেই মোদির আসন্ন এই ঢাকা সফর পরবর্তী অর্ধ শতাব্দীর জন্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি।
দোরাইস্বামী বলেন, "আমরা এখনও এ সফর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারিনি, তবে পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে স্মরণীয় এই স্বাধীনতা ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে যোগ দেবেন।"
তিনি আরও বলেন, দু'দেশের কর্মকর্তারা এই সফরে দুই জাতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন।
তার বক্তব্যকালে, ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, ভ্যাকসিন সহযোগিতা, বাণিজ্য, এবং সমুদ্রসীমাসহ সকল মূখ্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলিকে উল্লেখ করেছিলেন।
এর আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন ২৬ মার্চ উদযাপনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি মোদী ২৭ মার্চ শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পিএম-স্তরের আলোচনার এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করবেন বলে জানা গেছে।
দোরাইস্বামী আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার বিচার যেকোনো সময় হতে পারে কারণ এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বাধা নেই।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি আইনী আনুষ্ঠানিকতায় না গিয়ে আমাদের এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া উচিত।"
হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছে তার বিচারের উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার যেকোনো সময়ই শুরু করতে পারে।
একাত্তরে গণহত্যার অপরাধ ধেকে বাঁচার জন্য পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দোরাইস্বামী এসব কথা বলেন।
চলতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের এই সময়ে প্রশ্নটি ঐতিহাসিকভাবে খুব প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, "ইতিহাস ইতিহাসই।"
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়াসহ দেশটির সাথে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানের গুরুত্বকে সম্প্রতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
এছাড়া বাংলাদেশে আটকা পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন কাজ শেষ করা এবং সম্পদের বিভাজনের বিষয়টিরও নিষ্পত্তি চেয়েছে ঢাকা।
তবে বাংলাদেশ এটিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার কখনো ভোলা সম্ভব নয় এবং এই বেদনা চিরকাল থাকবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তারা হলেন ডিকাব সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মইনুদ্দিন।
মতামত দিন