গত বছরের মার্চ মাসে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি দেশের বাজারেও কমে যায় দাম। তাই অব্যাহত লোকসানে কাঁকড়া খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মহামারির ধাক্কায় কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারিরা।
এ দুর্দিনে দরিদ্র কাঁকড়া চাষিদের নিকট খামারগুলো টিকিয়ে রাখা এখন দায় হয়ে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত লোকসানে ইতোমধ্যে তাদের ছোট-বড় বেশ কিছু খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
গত বছরের মার্চ মাসে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি দেশের বাজারে কমে যায় দাম। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চলতি বছর আরও অনেক খামারির কাঁকড়া চাষ বন্ধ করে দেয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে অনেক খামারি ব্যাংক ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো রকম খামার বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের বাজারে দাম না পাওয়ায় তা বিক্রি করতে পারছে না। ফলে দিনের পর দিন বাড়ছে তাদের ঋণের বোঝা।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী শেখ আনারুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরেই নানা প্রকার রোগ বালাইয়ের কারণে চিংড়ি চাষে তেমন লাভ না হওয়ায় অনেক খামারি কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েন। তাতে লাভও ভালো হতে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের থাবায় কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। রপ্তানি বন্ধ ও দাম কমে যাওয়ায় সব খামারের কাঁকড়া সময়মতো বিক্রি করতে পারেনি। এক পর্যায়ে পুকুরেই কাঁকড়া মরে যায়।
এ অবস্থায় চীনে সরাসরি কাঁকড়া রপ্তানি চালু করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনা সুদে ঋণ দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
তবে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার ৬৩ জন কাঁকড়া চাষিকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আর খামারিরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্থ খামারির তুলনায় সরকারের এ সহায়তা অপ্রতুল।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী দেবু ঘরামী বলেন, রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া সাধারণত পাঁচটি গ্রেডে বিক্রয় হয়। বর্তমানে প্রত্যেক গ্রেডের দাম ৩শ থেকে ৪শ টাকা কেজিতে কমেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ২০০ গ্রাম (ফিমেল) ওজনের কাঁকড়ার কেজি ছিল ১ হাজার ৫শ থেকে ১ হাজার ৭শ টাকা, ওই কাঁকড়া বর্তমানে ৮০০ টাকা। ১৮০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ১ হাজার টাকা, তা বর্তমানে ৬০০ টাকা। ১৫০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ৮০০ টাকা, এখন তা ৪০০ টাকা। ১০০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ৬০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এমন দামে কাঁকড়া বিক্রি করে চাষিদের যেমন খরচ ওঠে না, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও লোকসানে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে পাইকগাছা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বিভাগের কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন পিন্টু বলেন, "কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় হয়েছে। খামারিরা বিনা সুদে টাকা পেলে পুনরায় কাঁকড়া চাষ করতে আগ্রহী হবে।"
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, "বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ করা খামারিরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। প্রতিদিন কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাত হয়, তাদের কষ্টের কথা শুনেছি। চেষ্টা করছি তাদের বিষয় উপরমহলে জানানোর জন্য।"
মতামত দিন