সম্প্রতি বনের ভেতর ও বন সংলগ্ন এলাকায় বন্যপ্রাণী নিধন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হলো “সুন্দরবন” যা প্রাকৃতিক সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে প্রকৃতি বিরোধী কিছু অসাধু ও স্বার্থপর মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বন্যপ্রাণী নিধন দিন দিন বেড়েই চলছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সুন্দরবনে বৈধ পাস-পারমিট নিয়ে যেসব জেলে-বনজীবী গিয়েছিলেন, তাদের বন থেকে বেরিয়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন জানান, "বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে রেড অ্যালার্ট বাস্তবায়নে মৌখিকভাবে ফাঁড়ি ও ক্যাম্পগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।"
তিনি জানান, "সম্প্রতি বনের ভেতর ও বন সংলগ্ন এলাকায় বন্যপ্রাণী নিধন বেড়ে যাওয়ায় এ রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। পাশাপাশি বনরক্ষীদের টহল জোরদার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বনে ছোট ডিঙি নৌকা চলাচলের ওপরও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন - দিনাজপুরে অবমুক্তির অপেক্ষায় ২০টি শকুন
খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, "তিনি নিজেই হরিণসহ সুন্দরবন সুরক্ষার আন্দোলন করে আসছেন। প্রতিবাদ মুখর থাকার কারণে তিনি অনেকেরই বিরাগভাজন হচ্ছেন। তারপরও তিনি থেমে নেই।"
তিনি আরও বলেন, “শিকারিরা নিশ্চয়ই কারও না কারো ছত্রছায়ায় এ কাজে যুক্ত রয়েছে। যারা আটক হচ্ছে তারা সমাজের উপরের সারির লোক। সমাজের প্রতিষ্ঠিত লোকদের প্রশ্রয় ছাড়া এরা সক্রিয় থাকতে পারে না।”
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, "পশ্চিম বন বিভাগে রেড এলার্ট দেয়ার মত কোনো ঘটনা নেই।"
তিনি জানান, "সম্প্রতি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় এ অপরাধে জড়িতদের তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার বিধিমালা-২০২০ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন চোরা শিকারিদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ তথ্য প্রদানে উৎসাহিত হয়েছে। এখন পুরস্কার ঘোষণার কারণে বন্যপ্রাণীর অংশসহ আসামি আটক হচ্ছে। আসলে নতুন বিধিমালার পর মানুষের সচেতনতা বেড়েছে।"
আরও পড়ুন - বন বিভাগের সহযোগিতায় হাতি হত্যার অভিযোগ
বিধিমালা-২০২০ অনুযায়ী সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বাঘের চামড়াসহ আটক করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে তথ্য প্রদানকারীকে ৫০ হাজার টাকা ও সুন্দরবনের বাইরে বাঘের চামড়াসহ আটক করার ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
অপরদিকে, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হরিণের চামড়াসহ আটক করার সহায়তাকারীকে ২০ হাজার টাকা ও সুন্দরবনের বাইরে হরিণের চামড়াসহ আটক করায় সহায়তাকারীকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। একই সাথে তথ্য প্রদানকারীর নিরাপত্তা ও তথ্য গোপন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে বনের অভ্যন্তরে বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন চোরা শিকারি ও পাচারকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বন বিভাগ, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বন্যপ্রাণী নিধন রোধে ব্যাপক অভিযান চালালেও কোনোভাবেই থামছে না সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী হত্যা।
এর মধ্যে গত এ পক্ষকালে ৪টি মাথা, ১২০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ এবং ১২ শিকারিকে আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - শকুন সংরক্ষণে বাংলাদেশ, কী করছে সরকার?
আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
মতামত দিন