‘এসব শকুন অবমুক্ত করার সময় প্রতিটির পায়ে একটি বিশেষ চিহ্ন (ট্যাগ) দেওয়া হয় যেন এই শকুন অন্যদেশে গেলে বোঝা যায় এটি বাংলাদেশের পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সেখানে গেছে’
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত অসুস্থ শকুনদের নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বছরও এমন ২০টি শকুন অবমুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সিংড়ার শকুন পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসুস্থ অবস্থায় ২০টি শকুন উদ্ধার করা হয়। এসব শকুনকে খাবার হিসেবে দৈনিক গড়ে ৬ কেজি ব্রয়লার মুরগি ছাড়াও খাবার স্যালাইন, ভিটামিন, ওষুধ পানি ইত্যাদি দেওয়া হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য একটি পানির হাউস স্থাপন করা হয়েছে। সেটি সাত দিন পর পর চুন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়।
সিংড়া জাতীয় উদ্যানের শুকুন পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা বেলাল হোসেন বলেন, এসব শকুনকে আরও বেশি খাবার দিতে পারলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু বাজেটের স্বল্পতা আছে।
আরও পড়ুন - বন বিভাগের সহযোগিতায় হাতি হত্যার অভিযোগ
সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবিট কর্মকর্তা হরিপদ দেব নাথ বলেন, “চার বছর ধরে বিলুপ্তপ্রায় শুকুন বাঁচাতে দিনাজপুর বন ও আইইউসিএন বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ভারতের হিমাালয় পাদদেশ থেকে এসব শকুন অতিথি পাখি হিসেবে আমাদের দেশে আসে। এই কর্মসূচীর আওতায় অসুস্থ শকুন উদ্ধার করে পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করা হয়। পরে এসব শকুন প্রতিবছর র্মাচ-এপ্রিল মাসে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, গত বছর ১৩টি সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবারও পরিচর্যায় থাকা ২০টি শকুনকে প্রকৃতিতে ছাড়া হবে। এসব শকুন ছাড়ার সময় প্রতিটির পায়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিশেষ চিহ্ন (ট্যাগ) দেওয়া হয় যেন এই শকুন অন্যদেশে গেলে বোঝা যায় এটি বাংলাদেশের পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সেখানে গেছে।”
আরও পড়ুন - শকুন সংরক্ষণে বাংলাদেশ, কী করছে সরকার?
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, প্রতি বছর শীতে সাধারণ হিমালয়ী শকুন (Himalayan Griffon) বা “হিমালয়ান গৃধিনী” বাংলাদেশে পরিযায়ন করে। দীর্ঘ যাত্রাপথে খাবারের অভাব ও ক্লান্তির কারণে অনেক সময় এসব শকুনটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, “পৃথিবীতে দ্রুততম বিলুপ্ত হতে চলা প্রাণী শকুন। তাই শকুনমাত্রই বিশ্বে ‘মহাবিপন্ন’ (Critically Endangered)। বাংলাদেশে শকুনের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আইইউসিএনের হিসেবে বাংলাদেশে মাত্র ২৬৮টি শকুন রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেনের ব্যবহার, খাদ্য সংকট এবং বাসস্থান সংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত এই পাখিটি হারিয়ে যাচ্ছে। শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেলে সুন্দর একটি পাখি হারানো পাশাপাশি দেশের মানুষ অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্কসহ পশু হতে সংক্রামক রোগের ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। বন বিভাগসহ আইইউসিএন শকুন রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাখিটির প্রতি আমাদের সদয় হওয়া খুবই প্রয়োজন।”
আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
মতামত দিন