‘মিয়ানমারে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি সচল হওয়ার পরই ডিজি-পর্যায়ের আলোচনার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠক মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হয়ে গেছে। এক কূটনীতিক বলেন, “হ্যাঁ, মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে এটি স্থগিত হয়ে গেছে।”
তিনি জানান, মিয়ানমারে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি সচল হওয়ার পরই ডিজি-পর্যায়ের আলোচনার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল।
এরআগে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে মিয়ানমার সামরিক সরকারের অধীনে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল। ‘আমরা প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চাই। প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখা উচিত যেমন আমরা ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে প্রত্যাবাসন দেখেছি- এবার কেন নয়? এটি মিয়ানমারের জন্য একটি সুযোগ। তাদের এই সুবিধা নেয়া উচিত।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব যোগাযোগের চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় তারা এই মুহূর্তে মিয়ানমারের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ভার্চুয়ালি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি এখনও এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। ‘কর্মকর্তারা এটি নিয়ে কাজ করছেন।’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সম্প্রতি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ ঘটনায় প্রতিবেশী দেশটিতে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা বহাল থাকবে এবং দেশটির সাথে ঢাকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘আমরা মিয়ানমারের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবিচল রয়েছি এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি যে এই প্রক্রিয়াগুলো অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও তার বিকাশে বিশ্বাসী উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা সমুন্নত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে শাসন করছে এবং অনেক দেশ কেবল নিন্দা করেই তাদের কাজ শেষ করে। ‘আমরা বলেছি আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং আমাদের বার্তা দৃঢ়ভাবে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ মিয়ানমারে নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘আমরা তাদের স্বাগত জানাইনি তবে আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি তারা যেন তাদের দেশে গণতান্ত্রিক নীতি ফিরিয়ে আনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অং সান সু চির মুক্তি দাবি করিনি। বরং রোহিঙ্গারাও হয়ত দাবি করবেন সুচিকেও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হোক।’
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমারে যখন একটি নির্বাচিত এবং গণতান্ত্রিক সরকার ছিল তখন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল এবং কেউ তা মেনে নিতে পারে না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ সব দেশে যোগাযোগ করেছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে।
তিনি বলেন, সবাই মুখে কথা দিয়েছে তবে চীন এগিয়ে এসেছিল। ‘আমরা চীনের নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, আমরা চীনের ওপর আমাদের আস্থা রেখেছি।’
ড. মোমেন বলেন, কিছু দেশ মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আরও রোহিঙ্গা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কিন্তু বাংলাদেশ তার সীমান্তকে সুরক্ষিত রেখেছে। ‘অতীতে আমাদের জনগণ রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছিল। এখন, তারা আর স্বাগত জানানোর মানসিকতায় নেই।’
মতামত দিন