কারখানার মালিক গুদাম থেকে বিদেশি অ্যালকোহল নিয়ে বিক্রি করতেন এবং 'প্রধান কেমিস্ট' বিদেশি মদের পুরনো বোতল বিক্রি করতেন
বাংলাদেশে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মদ খেয়ে বিষক্রিয়ায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশ খাঁটি ইথানলযুক্ত মদ তৈরির কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
এরই অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোমবার (১ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অবৈধ কারখানার সন্ধান পায়।
খিলবাড়ির টেকে অভিযানের সময় তারা কারখানার মালিকসহ ছয়জনকে গ্রেফতারও করে।
সোমবার রাত দশটার নাগাদ জেলা প্রশাসক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল (গুলশান বিভাগ) দুই ঘণ্টার এই অভিযান চালায় বলে একটি মাধ্যম জানায়।
মশিউর রহমান জানান, গত দু'দিনে ঢাকায় অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের পর গোয়েন্দারা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দারা প্রথমে ডেলিভারিম্যানকে এবং পরে সরবরাহকারি ও পাইকারকে শনাক্ত করে এবং সবশেষে এই কারখানার অবস্থান শনাক্ত করে। দেশের অন্যতম গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
কারখানার মালিক মো. নাসির গুদাম থেকে বিদেশি অ্যালকোহল নিয়ে বিক্রি করতেন। অন্যদিকে, "প্রধান কেমিস্ট" মো. জাহাঙ্গীর বিদেশি মদের পুরনো বোতল বিক্রি করতেন।
ডিবি কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় তাদের দু'জনসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এছাড়াও, জনগণের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন ক্ষতিকারক পণ্য সজ্ঞানে বিক্রির জন্য তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও করা হবে বলেও তিনি জানান।
অ্যালকোহলের বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যু
বগুড়ায়, মেয়াদোত্তীর্ণ মদপানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে।
সর্বশেষ মৃতের নাম রামনাথ রবিদাস (৬৮), যিনি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রবিবার রাত থেকেই এই ট্রাজেডিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহত আরও ছয়জন হলেন- প্রেমনাথ রবিদাস (৬০), সুমন রবিদাস (৩৮), সাজু প্রামানিক (৫৫), পলাশ মিয়া (৩৫), আবদুল জলিল (৬৫) এবং জুলফিকার রহমান (৫৫)।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির রামনাথের মৃত্যুর প্রসঙ্গে বলেন, "এখন পর্যন্ত একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন।"
ময়না তদন্তের জন্য তাদের মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, একই সূত্রে তিনটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রঞ্জুর ভাই মনোয়ার হোসেন সোমবার রাতে মামলাটি করেন। রঞ্জু ভেজাল মদপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সুমন, তার বাবা প্রেমনাথ, চাচা রামনাথ এবং আরও কয়েকজন জেলা শহরের তিনমাথা এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে রবিবার রাতে হোমিওপ্যাথির ওষুধের দোকানে মদ পান করেন।
বাড়ি ফেরার পর সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্য একটি ঘটনায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় একটি শীর্ষস্থানীয় জনসংযোগ ও বিজ্ঞাপন সংস্থার অন্তত তিন কর্মী গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে ফিরে আসার পর ঢাকা হাসপাতালে অ্যালকোহল বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
কোম্পানিটির প্রায় ৪৩ জন কর্মী গত ২৮ জানুয়ারি শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ীর সারা রিসোর্টে যান এবং ৩০ জানুয়ারি চেক আউট করেন।
পুলিশ জানায়, তাদের কিছু কর্মী রিসোর্টে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করে এবং ঢাকায় ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিষক্রিয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন, "সারা রিসোর্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন।"
কিছু কর্মী এখন ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, এবং ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, "মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তারা বিষক্রিয়ার ফলে শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় মারা যান। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিসেরা পরীক্ষা করা হবে।"
নিহতদের মধ্যে দুজন রবিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং অপরজন সোমবার উত্তর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এ এম সেলিম রেজা এক নিহতের ময়নাতদন্ত করেছেন।
তিনি বলেন, "আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কারণ বলতে পারছি না তবে মদ্যপানের বিষক্রিয়ায় হতে পারে বলে সন্দেহ। কোন বিষ বা অ্যালকোহলের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।"
সোমবার রাতে পুলিশ দণ্ডনীয় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে বলে জানান গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন ।
গণমাধ্যম সংস্থার এক কর্মী বলেন, অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করায় তাদের এক সহকর্মীর বেশ কয়েকটি অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। তিনি জানান, "তার অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ।
ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশিষ কুমার চক্রবর্তী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, "বিজ্ঞাপনী সংস্থার আরেক কর্মী হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে আছেন।"
তিনি বলেন, "যে রোগীর একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে তিনি এখনও সাড়া দেননি।"
অল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণ অ্যালকোহল সেবন করা হলে বা বিষাক্ত মদ করলে এমনটা ঘটে।
মতামত দিন