‘লাঠি কেটে রাখতে হবে। যদি ভোটের দিন ব্যবহার করার দরকার পড়ে, তাহলে ব্যবহার করবেন। না হলে ভোটে বিজয়ী হওয়ার পরে ওই লাঠি খেলা হবে’
রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের "লাঠি কাটা" ও "লাঠি খেলা" দেখানোর নির্দেশনা দিয়ে এবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। জনসম্মুখে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনমূলক সাংসদের এমন বক্তব্য দলের ক্ষতির কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তানোরের পাচন্দর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত কর্মী সভায় তার দেওয়া বক্তব্যের ৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
ভিডিওতে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে বলতে শোনা গেছে, “প্রতিটা কেন্দ্রে আমার নির্বাচনের সময় ২০০৮ সালে বলেছিলাম একশো, দেড়শ, দু’শো করে লাঠি কেটে রাখবেন। বলেছিলাম না? ২০০৮ সালের কথা এটা। ওই ফর্মুলা নিয়ে নিতে হবে মাথায়। লাঠি কেটে রাখতে হবে। যদি ভোটের দিন ব্যবহার করতে হয়, যদি ভোটের দিন ব্যবহার করার দরকার পড়ে, তাহলে ব্যবহার করবেন। না হলে ভোটে বিজয়ী হওয়ার পরে ওই লাঠি খেলা হবে। শালা আওয়ামী লীগের খাও আর আওয়ামী লীগের গায়ে থুথু ফেল?”
ফারুক চৌধুরী বলেন, “...ভোটের দিনে লাঠি চলবে না হলে পরের দিনে লাঠি চলবে। বিজয়ী হয়ে লাঠি চলবে। এখনও সময় আছে, শালা ঘরে উঠে যাও সব। যদি না উঠো আমার নেতাকর্মী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতাকর্মী জানে কিভাবে এদেরকে ঘরে তুলতে হয়। আমরা আঠারো সালেই দেখিয়ে দিয়েছি কিভাবে কাকে ঘরে ঢুকায়ে দিতে হয়। জানা নাই? হয় আট সালের ফর্মুলা না হলে আঠারো সালের ফর্মুলা ধরতে হবে। দুটাই ফর্মুলা আছে।”
বিএনপিকে লক্ষ্য করে এই সাংসদ বলেন, “বিএনপি লাফাচ্ছে নাকি? আচ্ছা আমি বলছি, আমি বলে দিচ্ছি বিএনপির এই মাটিতে যিনি জন্ম দিয়েছিলেন, তাকে কিন্তু আপনারাই পরাজিত করেছেন ভোটে। এবং পরাজিত হওয়ার পরে সেই ভদ্রলোক স্ট্রোক করে মরে গেছে, পৃথিবীতেই নাই। তো এখন ওইখান থেকে কিছু পোকা কীটপতঙ্গের জন্ম হয়েছে হয়তো। সেই কীটপতঙ্গ নিয়ে কথা বলার আমার কোনো দরকার আছে? আমি মনে করি না। ফর্মুলা দুটাই দিয়েছি আমি। হয় আট সালের ফর্মুলা নাহলে আঠারো সালের ফর্মুলা। আমি রাজশাহীতেই আছি, অসুবিধা নাই। আমার গাড়ি নিয়ে এখানে আসতে বেশি সময় লাগবে না।”
বক্তব্যের শেষাংশে আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, “...থাকবেন, দেখবেন, ভোট করবেন, বিজয়ী হবেন, লাঠি নিবেন, লাঠি খেলা করবেন, বাড়ি চলে যাবেন।”
এদিকে, সংসদ সদস্যের প্রকাশ্যে এ বক্তব্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমন বক্তব্য সাংসদের "সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের" অংশ ও "উস্কামিূলক বক্তব্য" উল্লেখ করে আসন্ন পৌর নির্বাচনে অবাধ-সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “সরকারের একজন এমপি প্রকাশ্যে এভাবে বক্তব্য দিয়ে ভোট ডাকাতির আরেকটি স্বাক্ষর রেখেছেন। সাংসদের উস্কামিূলক এমন বক্তব্যই বলে দেয়, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়।”
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “সংসদ সদস্যের এ ধরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর। তার এ বক্তব্য কোনো কর্মীসভায় যায় না। তাছাড়া হেরোইন সিন্ডিকিটে জড়িত থাকাসহ তার বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রেও অনেক অভিযোগ রয়েছে।”
এ বিষয়ে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তিনি স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীকে বলেছেন, “লাঠির তো অনেক ভাষা আছে। আমি তো কাউকে মেরে রক্তারক্তি করে দিতে বলিনি। আমি বলেছি নির্বাচনের পর লাঠিখেলা হবে।”
মতামত দিন