পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষক এমএ হাসান জানান, মুসা প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার নাটক করছেন
সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণ থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরা আবু মুসা (৪২) শুনিয়েছেন “লোমহর্ষক” এক কাহিনী।
জানা গেছে, সম্প্রতি দুই সহযোগীসহ মুসা বাঘের আক্রমণের কবলে পড়েন। হামলায় প্রাণ হারান ওই দু’জন।
আবু মুসা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
মুসা বলেন, তিনিসহ একই এলাকার কফিলউদ্দিনের ছেলে রতন (৪২) এবং তার ভগ্নিপতি একই গ্রামের মনোমিস্ত্রির ছেলে মিজানুর রহমানকে (৪০) টাকার প্রলোভন দেখিয়ে গহীন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চোরাই পথে ভারতে গরু আনতে পাঠায় একটি চোরাচালান চক্র। নদী পথে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় রাত হয়ে যায়। এসময় তারা জঙ্গলের পাশে সাতঝিলের খাল নামক স্থানে নৌকা রেখে রাত কাটান।
রাত পেরোলে ভোরে নৌকার উপর একটি বাঘ লাফিয়ে পড়ে। তিনজনের মধ্যে বাঘ লক্ষ্য করে মিজানকে। এসময় মিজানকে বাঁচাতে রতন বাঘের ওপর হামলা করেন। বাঘটি তখন মিজানকে ফেলে রতনকে আক্রমণ করে হত্যা করে। এরপর বাঘটি মিজানকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে চলে যায়।
বাঘ আক্রমণ করলে মুসা নদীতে লাফিয়ে পড়ে নৌকার তলায় নাক বের করে রেখে প্রাণে বেঁচে যান। এরপর তিনি নৌকার নিচে থেকেই কৌশলে নৌকার বাঁধন খুলে ভাটির টানে দূরে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আবার উজানে নৌকা বাইতে থাকে। এভাবে দিক ও পথ হারিয়ে ফেলেন মুসা। এসময় নৌকার উপর থাকা একটি মোবাইল ফোন আচমকা বেজে উঠলে তিনি সেই মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে খবর দেন। এরপর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার না থাকায় তিনি আর কথা বলতে পারেননি।
মুসা আরও জানান, নদীতে ভাসমান অবস্থায় ভারতীয় সীমান্তের মাছধরা জেলেরা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে সেদেশের একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়। এরপর তাদের সহযোগিতায় তিনি সীমান্তের বকচর নামক স্থান দিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে মুসার পরিবারের লোকজন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। বাড়িতে ফিরে আসার পর আবু মুছা কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। স্থানীয় চিকিৎসায় তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ঘটনার বিবরণ দেন।
আবু মুসা বলেন, দীর্ঘদিন তিনি বাড়িতে থাকার কারণে অর্থকষ্টে ছিলেন। একই এলাকার মামুন, আজিজুল, সোহরাবসহ কয়েকজন তাদের গরু আনতে পাঠায়। এ চক্রের সঙ্গে তার ভগ্নিপতি মিজানুর এবং রতনও জড়িত ছিলেন।
সাতক্ষীরা নীলডুমুর বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ক্যাম্পের সদস্যরা রবিবার বিকেলে আবু মুসাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একই কথা বলেছেন বলে জানায় সূত্র।
এদিকে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষক এমএ হাসান জানান, ঘটনার পর থেকেই মুসা তার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার নাটক করেছেন।
স্থানীয় খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, মুসা ভারতে ছিল না। সে দেশেই ছিল, তবে আত্মগোপনে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সুন্দরবন থেকে তিনজন নিখোঁজ হয় বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
মতামত দিন