উপকারভোগী বাছিরন বলেন, ‘ঘরের কাজ ভালো করার জন্য পাঁচ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। তাছাড়া ঢালাইয়ের কাজে রডসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে’
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গৃহনির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের কাজ, উপকারভোগীদের কাছে টাকা ও নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া, হস্তান্তরের আগেই স্থাপনায় ফাঁটলের অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমি পাকা গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি গৃহ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেরপুর উপজেলায় প্রায় তিন কোটি টাকার এই কাজের দেখভাল করছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে সুঘাট ও শাহবন্দেগীতে গৃহ নির্মাণ হচ্ছে না।
মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের আলাউদ্দিন রনি জানান, তাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট, খোয়ার পরিবর্তে রাবিশ, নিম্নমানের বালু ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। একটি ঘরের দেয়ালে ফাঁটল ধরেছে। যেভাবে কাজ হয়েছে, তাতে মনে হয় এসব ঘর বেশিদিন টিকবে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি।
প্রকল্পের ১২ নম্বর উপকারভোগী কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া কলোনী গ্রামের বাছিরন বেগম জানান, “ঘরের কাজ ভালো করার জন্য পাঁচ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। তাছাড়া ঢালাইয়ের কাজে রডসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে।”
তার পুত্রবধূ লাইজু খাতুন জানান, “এসব না দিলে কাজ ভালো হতো না।”
১ নম্বর উপকারভোগী একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী রুবিয়া খাতুন জানান, “আমিও কাজ ভালো করার জন্য দুই বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু ঘরের কাজ ভালো হয়নি। ঘরের মেঝেসহ অন্যান্য কাজ ভাল হয়নি। পলেস্তরা খসে পড়ছে।”
৬১ নম্বর উপকারভোগী মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের ছারা খাতুন জানান, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘর দিছে আমি খুশি হচি বাবা। কিন্তু ঘর তৈরিতে সিমেন্ট দিচে অল্প, বালু দিচে বেশি।”
২৭ নম্বর উপকারভোগী খামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, কাজের সময়ই ঘরের একটি পিলারে ফাঁটল ধরেছে। তড়িঘড়ি কাজ করায় এ সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান, খামারকান্দিতে যে আরো দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে নিচু জায়গায়। সামান্য বন্যাতেই ঘর তলিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান ওয়াদুদ বলেন, “প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। এখন নয়, এসব বিষয়ে বক্তব্য পরে দিব।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বলেন, “প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দুই একটি জায়গায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পেলেও সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। তবে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা বা সিমেন্ট নেয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।”
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ বলেন, “উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে শেরপুর উপজেলায় ১৬৩টি গৃহ নির্মাণ দুস্থদের পুর্নবাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গৃহ নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এছাড়া কোনো উপকারভোগীদের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া হয়নি।”
মতামত দিন