শুধু আসামির বাবার নামের সঙ্গে আরমানের বাবার নামের মিল থাকায় আরমানকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই ঘটনায় অপরাধী না হয়েও গত পাঁচ বছর কারাবন্দী ছিল আরমান
প্রবাদে আছে, “নামে নামে যমে টানে”। প্রবাদের কথাই যেন বাস্তবে রূপান্তির হয়েছে আরমান বিহারীর জীবনে। শুধু বাবার নামে সঙ্গে মিল থাকায় অপরাধ না করেও পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দী ছিলেন তিনি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-২ থেকে হাইকোর্টের এক আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
ওই কারাগারের ডেপুটি জেলার আলী আফজাল মুক্তি দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাবার নামের সঙ্গে প্রকৃত আসামির বাবার নামের মিল থাকায় আরমান একটি মাদক মামলায় ৫ বছর জেলে ছিলেন। তিনি ঢাকা মিরপুরের বেনারসী কারিগর।
জেলার মুক্তিপ্রাপ্তের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, শুধু বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় ২০১৬ সালে ২৭ জানুয়ারি পল্লবী থানা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যদের আবেদন ও শুনানির ভিত্তিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন।
জেলার আরও জানান, বিস্ফোরক আইনে ২০০৫ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এক মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় সাতজনকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের সহযোগীদের ধরতে আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম সিদ্দিকী পল্লবীর বিহারী ক্যাম্পে অভিযান চালায়। সেখানে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিন বিহারি ও তার দুই সহযোগী আটক করা হয়। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। শাহাবুদ্দিনসহ গ্রেপ্তার তিন জনের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০০৭ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্ত হয় শাহাবুদ্দিন। পরে ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবার আবেদন করে শাহাবুদ্দিন জামিন নেয়। এরপরই শাহাবুদ্দিন ফেরারী হয়। এদিকে তার দুই সহযোগী কারাগারে থেকে যান ।
ওই মামলায় ২০১২ সালের ১ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর ১০ বছরের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা রায় দেন ঢাকার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফারুক আহম্মদ। এরপর পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পল্লবীর ব্লক-এ, ১০ নম্বর সেকশন এলাকায় অভিযান চালায় পল্লবী থানা পুলিশ। এ অভিযানে পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল একটি চায়ের দোকান থেকে মূল আসামি শাহাবুদ্দিনের বাবার নামের সাথে মিল থাকায় আরমানকে গ্রেপ্তার করেন । এরপর থেকে আরমানকে কাশিমপুর কারাগার-২ এ রাখা হয় ।
আইনজীবি হুমায়ূন কবিরের পল্লবীর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আরমানকে মুক্তি দেয়াসহ তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশ দেন। অপরদিকে বিনা অপরাধে জেলা খাটার বিষয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আরমান ও তার স্বজনরা।
মতামত দিন