‘সার্জেন্ট আটকালে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং চেলাকাঠ সার্জেন্টকে বেধড়ক মারপিট করেন। সার্জেন্টের মাথায় মেরে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল’
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চাওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর হামলা চালায় বেলাল হোসেন(২৬) নামে এক যুবক।
বুধবার (২০ জানুয়ারি ) দিবাগত রাত ১টার দিকে বাসে করে পালানোর সময় নাটোর জেলার মাদরাসা মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি ) রাতে নগরীর রাজপাড়া থানায় বেলালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী আহত ট্রাফিক সার্জেন্ট বিপুল ভট্টাচার্য নিজেই।
আসামি বেলাল নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম শামসুল হক। বেলাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সার্জেন্ট বিপুল এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকেই তিনি মামলার এজাহারে স্বাক্ষর করেন বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম।
বেলালকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় আরএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, “আমার ২২ বছরের চাকরি জীবনে এমন নৃশংস ঘটনা আর দেখিনি।”
সংবাদ সম্মেলনে আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদ হোসেন, শাহমখদুম জোনের ডিসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, “আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে চাকরি করেছি দীর্ঘদিন। এটা ব্যতিক্রমধর্মী ও অস্বাভাবিক ঘটনা। সে পলাতক অবস্থায় ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমরা আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে একটা টিম গঠন করেছি। সেই টিম রাত ১টার সময় বেলালকে গ্রেফতার করেছে।”
পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, হামলাকারী বেলালের মোটরসাইকেলের কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিআরটিএ’তে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া তার মাথায় হেলমেটও ছিল না। এ কারণে সার্জেন্ট আটকালে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং চেলাকাঠ সার্জেন্টকে বেধড়ক মারপিট করেন। সার্জেন্টের মাথায় মেরে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, “কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করায় এবং তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করার জন্য হত্যাচেষ্টাসহ অন্যান্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। আমাদের অফিসার খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। যেসব ধারা কভার করে আমরা সেসব ধারায় মামলা করেছি। এখন আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করব, তার উত্তেজিত হবার পেছনে কি কারণ ছিল। সে মাদকাসক্ত ছিল কিনা। তার অতীতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল কি না, তার সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীকে আবারও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “সিসি টিভির কারণে বেলাল আমাদের হাতে ধরা পড়েছে। যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনব। রাজশাহী নগরীর প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা শহরে ২০০ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি। আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আগে মোট ৫০০ সিসি ক্যামেরা লাগাতে চাই। এই শহরে অপরাধ করে কেউ আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।”
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নগরীর বিলশিমলা ঐতিহ্য চত্বরে বিপুল ভট্টাচার্য নামে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছিলেন। হামলাকারী বেলাল ওই সময় হেলমেট ছাড়া একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। সার্জেন্ট বিপুল তার মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চান। একইসঙ্গে হেলমেট ও কাগজপত্র না থাকার কারণে তিনি মামলা লিখতে শুরু করেন। এতে করে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেলাল সার্জেন্ট উপর হামলা করে তাকে গুরুতর আহত করে। হামলায় সার্জেন্টের একটি হাত ও কলার বোন ভেঙে যায়।
মতামত দিন