• মঙ্গলবার, মার্চ ২১, ২০২৩
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৮:০৮ সকাল

বাঘের পায়ের ছাপে আতঙ্কে শরণখোলার গ্রামবাসী

  • প্রকাশিত ০১:৩৭ দুপুর জানুয়ারী ১২, ২০২১
সুন্দরবন-বাঘ
বাঘের পায়ের ছাপ। ঢাকা ট্রিবিউন

বাঘটি প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় বিচরণ করার পর সুন্দরবনে ফিরে গেছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অসংখ্য পায়ের ছাপ পড়ে আছে

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মাটিতে থাকা বাঘের পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে বন বিভাগ জানায়, মধ্য বয়সী একটি বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী পার হয়ে শনিবার রাতের কোনো এক সময় লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বাঘটি পুনরায় বনে ফিরে যায়।

তবে বাঘটি লোকালয়ে কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করেনি। এরপরও গ্রামবাসীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দিয়েছে বন বিভাগ।

স্থানীয়রা জানান, তারা রবিবার সকালে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান। রাস্তার পাশে, মাঠে এবং নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে ছিল। বাঘটি সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী সাঁতরিয়ে ওয়াপদার রাস্তা পার হয়ে গ্রামে ঢুকে।

এ ঘটনায় গ্রামবাসী ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যদের খবর দেন। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে আসে। বাঘের পায়ের ছাপ দেখার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। বিভিন্ন সময় বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করেছে। বাঘ-মানুষের পাল্টাপাল্টি হামলায় মানুষ ও বাঘের প্রাণহানিও ঘটেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, তারা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে থাকতে দেখেছেন। ছাপ দেখে মনে হয়েছে বাঘটি শনিবার রাতের কোনো এক সময় সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।

তিনি স্থানীয়দের বাঘ বন ছেড়ে আবারও লোকালয়ে ঢুকে পড়লে না মেরে বন বিভাগকে জানানোর পরামর্শ দেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ভোলা নদী ভরাট হওয়ার কারণে সুন্দরবন ছেড়ে বাঘটি বন বিভাগের দাসের ভারানি ক্যাম্পের সামনে থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বাঘটি প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা বিচরণ করার পর পার্শ্ববর্তী নাংলি ক্যাম্পের সামনে থেকে পুনরায় সুন্দরবনে ফিরে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অসংখ্য পায়ের ছাপ পড়ে আছে।

এর আগে গত বছরের ৮ অক্টোবর সুন্দরবন সংলগ্ন পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। এ বাঘ দুটিও সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এবং পুনরায় বনে ফিরে যায় বলে বন বিভাগ জানায়।

বাঘের সংখ্যা

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে ১১৪ হয়েছে।

বাঘ গণনা নিয়ে “সেকেন্ড ফেইজ- স্ট্যাটাস অব টাইগারস ইন বাংলাদেশ সুন্দরবন ২০১৮” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

ইউএসএআইডির আর্থিক সহযোগিতায় বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি (বাঘ) প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলা এ কার্যক্রমে চার ধাপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও শরণখোলা রেঞ্জের তিনটি ব্লকের ১ হাজার ৬৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশেষ এক ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করে জরিপ চালানো হয়।

তার আগে ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। তখন হিসাব অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।

ওয়াইল্ডটিম ও যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ সোনিয়ান কনজারভেশন ইনস্টিটিউটের সাথে বন অধিদপ্তর যৌথভাবে এবারের জরিপ পরিচালনা করে। আর জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে সাহায্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

বাঘের মৃত্যু

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ২০ বছরে নানা কারণে ৩৮ বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ব বিভাগে দুর্বৃত্তদের হাতে ১০টি, জনতার গণপিটুনিতে পাঁচটি, স্বাভাবিকভাবে ছয়টি এবং ২০০৭ সালের সিডরে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৬টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। আর পশ্চিম বিভাগে গণপিটুনিতে নয়টি এবং বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে সাতটি বাঘের মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এক সমীক্ষায় সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছিল, সমুদ্রের স্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত বৃদ্ধি ফলে বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার আগামী ৫০ বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে।

ওই সমীক্ষাটি টোটাল এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স নামের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণ করে থাকে।

50
Facebook 50
blogger sharing button blogger
buffer sharing button buffer
diaspora sharing button diaspora
digg sharing button digg
douban sharing button douban
email sharing button email
evernote sharing button evernote
flipboard sharing button flipboard
pocket sharing button getpocket
github sharing button github
gmail sharing button gmail
googlebookmarks sharing button googlebookmarks
hackernews sharing button hackernews
instapaper sharing button instapaper
line sharing button line
linkedin sharing button linkedin
livejournal sharing button livejournal
mailru sharing button mailru
medium sharing button medium
meneame sharing button meneame
messenger sharing button messenger
odnoklassniki sharing button odnoklassniki
pinterest sharing button pinterest
print sharing button print
qzone sharing button qzone
reddit sharing button reddit
refind sharing button refind
renren sharing button renren
skype sharing button skype
snapchat sharing button snapchat
surfingbird sharing button surfingbird
telegram sharing button telegram
tumblr sharing button tumblr
twitter sharing button twitter
vk sharing button vk
wechat sharing button wechat
weibo sharing button weibo
whatsapp sharing button whatsapp
wordpress sharing button wordpress
xing sharing button xing
yahoomail sharing button yahoomail