পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে চিন্তিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা বাতিল করে দিয়ে বলেছেন, ভারত থেকে যথাসময়েই ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়ন করা হবে। চিন্তিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান ড. মোমেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং ভারত একই সময়ে ভ্যাকসিন পাবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ বিষয়ে বাংলাদেশের চিন্তার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নেই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে এবং যা শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে।
দেশে কবে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মাসের শেষেই আসবে বলে আশা করছি।
সরকার কোনো বিকল্পের কথা ভাবছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন রকম চিন্তা ভাবনা করছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) সিইও যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত। এটা ভারত সরকারের কোনো নীতি না।
আরও পড়ুন - বেক্সিমকো: সেরামের টিকা পেতে সমস্যা হবে না
ভারতের “নেইবারহুড পলিসি ফাস্ট” এর আওতায় ভারত বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি করার সাথে সাথে বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মধ্যে চলমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেছেন উভয় নেতা।
উভয় দেশ নিজ নিজ দেশে চলমান কোভিড-১৯ মহামারির পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং চলমান সংকট চলাকালীন যেভাবে দুদেশের মধ্যে টেকসই সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
এর আগে, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) বাংলাদেশি অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সোমবার আশ্বাস দিয়েছে যে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সময়মতো টিকা আমদানি করবে।
বেক্সিমকোর সাথে যোগাযোগের বরাত দিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের রবিবার দেওয়া বিবৃতি বাংলাদেশের সাথে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আরও পড়ুন - স্বাস্থ্যমন্ত্রী: বাংলাদেশ সময়মতো ভ্যাকসিন পাবে
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ একটি অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।”
সেরাম ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে স্পষ্টতই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যেখানে তারা জানিয়েছে ভারতের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা কোভিড-১৯ টিকা রপ্তানি করবে।
জানুয়ারির শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য এসআইআই এবং বেক্সিমকোর সাথে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে, ভারত থেকে করোনার ভ্যাকসিন রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশে উদ্বেগ তৈরি হয়। সে উদ্বেগ প্রসঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, “ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের চুক্তি করেছে। ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র, ভারতের হাই কমিশনারও ভ্যাকসিন প্রদানে আশ্বাস দিয়েছেন। সবকিছু মিলে সরকার সময় মতোই ভ্যাকসিন পাবে।”
মতামত দিন