হরিণটি মানুষ অথবা কোনো শিকারি প্রাণী দেখলে অথবা ভয় পেলে অনেকটা কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে ডাকে। তাই একে বার্কিং ডিয়ারও (Barking Deer) বলা হয়
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে একটি মায়া হরিণ আটক করেছে স্থানীয় জনতা। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কাউয়ারগড় গ্রাম থেকে হরিণটি আটক করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত চার-পাঁচ দিন ধরে হরিণটি উপজেলার কাউয়াগর, উমরপুর, রাখালকান্দি গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে দেখা যাছিল। মঙ্গলবার সকালে কাউয়াগর গ্রামের হাওরে হরিণটি দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীরা তাড়া করে একটি পুকুরে ফেলে প্রাণীকে আটক করে।
এদিকে, মায়া হরিণ আটকের খবর পেয়ে গ্রামের মনফর আলীর বাড়িতে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। পরে বন বিভাগের লোকজন ও দোয়ারাবাজার থানার পুলিশ হরিণটি উদ্ধার করেন।
দোয়ারাবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল হাসান বলেন, “স্থানীয়দের কাছ থেকে হরিণটি উদ্ধার করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন - মুন্সীগঞ্জে ‘বাঘের’ ঘোরাফেরা, আসল রহস্য কী?
দোয়ারাবাজার উপজেলা বন কর্মকর্তা নীতিশ চক্রবর্তী বলেন, “হরিণ আটকের খবর পেয়ে কাউয়াগর গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে হরিণটি উদ্ধার করি। পরে হরিণটির চিকিৎসা করিয়ে সিলেটের বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।”
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, মায়া হরিণ (Indian muntjac) বা কাকর হরিণ, হরিণ প্রজাতির মধ্য খর্বকায় ও লাজুক স্বভাবের। এদের গায়ের রং লালচে বাদামী বা পিংগল বর্ণের। এরা মূলত একা চলাফেরা করে ও পানির উৎসের আশেপাশে বাস করে। সাধারণত এরা সকাল-সন্ধ্যা ডাকাডাকি করে। তবে হরিণটি মানুষ অথবা কোনো শিকারি প্রাণী অথবা ভয় পেলে অনেকটা কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে ডাকে। তাই একে বার্কিং ডিয়ারও (Barking Deer) বলা হয়।
আরও পড়ুন - ভারতীয় পাহাড় থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল মেছো বিড়ালটি
তিনি জানান, মায়া হরিণ এক বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। প্রতিবার সাধারণত এরা একটি করে বাচ্চার জন্ম হয়। তবে অনেক সময় দুটি বাচ্চারও হতে পারে। পূর্ণ বয়স্ক একটি মায়া হরিণের ওজন ১৪-২৮ কেজি। বন্য পরিবেশে এরা ১৫-২০ বছর বাঁচে।
জোহরা মিলা বলেন, “এক সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বিশাল এলাকজুড়ে প্রচুর মায়া হরিণের বাস ছিল। শিকার, বাসস্থান ধ্বংস ও উপযুর্ক্ত পরিবেশের অভাবে মায়া হরিণ দ্রুত কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মায়া হরিণকে “ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ” বলে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এই বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা, শিকার বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
আরও পড়ুন - পাখির বিষ্ঠা গায়ে পড়ায়...
আরও পড়ুন - বনের পথে দ্রুতগতির গাড়ি, প্রাণ গেল ‘বিপন্ন’ বাঘডাশের
আরও পড়ুন - কুমির ভেবে আটকে রাখা হয়েছিল ‘মহাবিপন্ন’ ঘড়িয়াল
মতামত দিন