‘কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে, তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জেনেছি। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা করছি’
কক্সবাজারের উখিয়া থেকে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১৩টি ও বিকালে ১০টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এতে অনুমানিক এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
আজ রাতে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাদের জলপথে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কেউ গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি।
তবে বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে সম্মতি জানিয়েছেন। যারা বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাস যোগে উখিয়া কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেছে। এসব রোহিঙ্গা পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিজ ইচ্ছায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে উদ্যোগী হয়েছে। একারণে সকাল থেকে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ভাসানচরে যাওয়ার তোড়জোড়। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। এখান থেকেই বাসে চেপে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে পৌঁছেছিল। তার আগের দিন ভাসানচরে যেতে আগ্রহী এসব রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গাড়িতে এনে চট্টগ্রামে শাহিন স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এবারও সেভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল করা হলেও কলটি রিসিভ হয়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “রোহিঙ্গাদের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ১৩টি বাস ভাসানচরে যাত্রা করেছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব বাসে প্রায় ৬শ’রোহিঙ্গা বাসে উঠেছেন। এরপর বিকাল ৩টায় আরও ১০টি বাসে রোহিঙ্গারা রওনা হন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাসে চেপেছেন ১১৩৪ জন রোহিঙ্গা। আরও যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
“সোমবার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পে বাস আসে। সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা আশেপাশে ভিড় করে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে এদিনই তারা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন”, যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, “আমাদের শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরে উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।”
পরিবারসহ ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে টেকনাফ শালাপুরের মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, “কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে, তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জেনেছি। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা করছি।”
টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, “আমার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে উদ্দেশ্যে উখিয়া রওনা দিয়েছে। আজ সেখান থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে তাদের ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে।”
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
মতামত দিন