নিছক গুজব ছড়িয়ে এ নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে
লালমনিরহাটে কোরআন শরিফ অবমাননার ঘটনায় কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, নিছক গুজব ছড়িয়ে এ নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকালে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির জেলা প্রশাসক আবু জাফরের হাতে প্রতিবেদনটি দাখিল করে। প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে জানিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার মতো সময় এখনও হয়নি বলেও জানান তিনি।
৩০ অক্টোবর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) টিএমএ মোমিনকে সভাপতি, লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামকে সদস্য সচিব ও লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক সহিদুল ইসলামকে সদস্য নিযুক্ত করা হয়।
এ কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তদন্তের প্রয়োজনে দুই দফায় আরও ৬ কর্মদিবসের জন্য আবেদন করে। অবশেষে বুধবার জমা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রস্তুত করতে দেরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার দাখিল করা হলো।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, “তদন্ত কমিটি দুই দফায় সময় নিয়ে মোট ৯ কর্মদিবস তদন্ত করে ৬ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আমার নিকট হস্তান্তর করেছে। এ প্রতিবেদনে পুরো ঘটনাটি তুলে আনা হয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে আপনাদেরকে বিস্তারিত বলার সময় আসেনি। তবে প্রতিবেদনে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে ওইদিন সেখানে কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিছক কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেছে। এসব ফৌজদারি অপরাধের কারণে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবুল, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার পরও সেদিন ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেদিন কার কী ভূমিকা ছিল, গুজব কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তার সবকিছুই সম্ভবত তদন্ত প্রতিবেদনে রয়েছে। তাই আমরা কোনও বিষয়ে মন্তব্য করছি না। যেহেতু ঘটনার ১৭-২০টি ভিডিও ফুটেজ আমরা হাতে পেয়েছি সেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক কিছুই উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয়।
লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও তদন্ত কমিটির সভাপতি টিএমএ মোমিন বলেন, “আমরা ১৭-২০টি ভিডিও সংগ্রহ করেছি। প্রকাশ্যে ও গোপনে ৫০জনের বক্তব্য নিয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত কাজের প্রয়োজনে আমরা ৭টি সভা করে সংগ্রহিত তথ্য-উপাত্ত বিন্যাস করে ৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৩ পাতা সংযুক্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪২টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার প্রারম্ভিকা, ঘটনার বিবরণ, অধিকতর তথ্যানুসন্ধান, গভীর পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও মন্তব্য করা হয়েছে। এতে দেশে যাতে এ ধরনের ঘটনা কোথাও না ঘটে এজন্য ৪টি সুপারিশমালা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ছাই করার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়। এতে ১১৪ জনকে এজাহার নামীয় আসামী সহ অজ্ঞাত শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত সর্বোমোট ৩২ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মতামত দিন