নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের নাগরপাড়া দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরীর শাখা নদী। নদীর দু’পাশে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, ঢাকার ধামরাই, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও নাগরপুর উপজেলার অবস্থান। এসব এলাকায় ৫০ হাজার মানুষের বাস, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত নদীটি পারাপার হন। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা।
নদীর এক পাড়ে রয়েছে নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন কহেলা কলেজ, দুটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, উয়ার্শী ইউনিয়ন স্থাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, আতুল্যা বাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, উয়ার্শী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, নাগরপাড়া বাজার, কহেলা বাজার ও আতুল্যা বাজার। নদীটির উত্তর পাশে মির্জাপুরের নাগরপাড়া, দাখিলি, নওগা, মৈশামুড়া, মজদৈই, সাফর্তাসহ ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম। দক্ষিণে কহেলা, মোস্তমাপুর, ধামরাইয়ের চৌহাটসহ কয়েকটি গ্রাম। এছাড়াও নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজনসহ মির্জাপুরের উয়ার্শী, মজদই, মৈশামুড়া, নবগ্রামের লোকজনকে ধামরাই ও মানিকগঞ্জে যেতে নদী পার হয়ে দক্ষিণ পারে যেতে হয়। মির্জাপুর উপজেলা সদর, জেলা শহর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য নদীটি পাড়ি দিয়ে নাগরপাড়া বাজারে যেতে হয়।
এসব এলাকার মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রভৃতি যানবাহনে যাতায়াত করে। কিন্তু সেতু না থাকায় নদী পার হওয়ার সময় তাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগের মুখে পড়েন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নাগরপাড়া ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হলে দুই পাড়ের মানুষের কষ্ট যেমন শেষ হতো তেমনই হাজারো মানুষের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি হতো।
নাগরপাড়া বাজারের কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী ফরিদ আক্তার বলেন, সেতু না থাকায় মামলামাল নিয়ে বাজারে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে খুবই কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। এতে করে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাছাড়াও সময়ও ব্যয় হচ্ছে।
নাগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, বর্ষাকালে আতঙ্ক নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। কলেজের এক ছাত্রী নৌকা ডুবে মারা যাওয়ার পর স্কুলে পাঠিয়ে মা-বাবা সবসময় ভয়ে থাকে।
ঘাটের খেয়ানৌকার মাঝি আশু আলী বলেন, নদীতে পানি কমে গেলে প্রতি বছর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। তখন ঝুঁকি নিয়ে মানুষ সাঁকোর উপর দিয়ে মোটরসাইকেল রিকশা-ভ্যান পারপার করে। ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল পারাপার হয়।
এ বিষয়ে মির্জাপুরের উয়ার্শী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মল্লিক বলেন, “নদীতে সেতু না থাকায় লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে নদী পারাপার হয়। বর্ষায় নদীতে প্রবল স্রোত থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হয়। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে কহেলা কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যুর পর বর্ষা এলেই শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে। ভয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের কাছে ব্রিজ নির্মাণের ডিও চেয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, “উয়ার্শী নদীর নাগরপাড়া ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর সাতকোটি টাকা ব্যয়ে ১৬০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই প্রস্তাবটির অনুমোদন পাব বলে আশা করছি।”
মতামত দিন