রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা একেবারেই বন্ধ। জনবল না থাকায় ইনডোরের রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে
উত্তরাঞ্চলের কুষ্ঠরোগীদের সেবার লক্ষ্যে নীলফামারী সদরের নটখানা এলাকায় ১৯৬৫ সালে ৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ২০ শয্যা বিশিষ্ট একট সরকারি হাসপাতাল। নীলফামারীসহ আশেপাশের ৮টি জেলার কুষ্ঠ রোগীরা এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসতেন। বর্হিবিভাগে লেগে থাকত হাজারো রোগীর ভিড়।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিকিৎসকসহ জনবল সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন হাসপাতালটি।
জনবল ও অভিক্ষ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালটির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন রোগীরা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ইনডোরে গড়ে ১০-১১ জন রোগী ভর্তি থাকে।
সূত্র জানায়, ঢাকা, সিলেট ও নীলফামারী এই তিনটি জেলায় কেবলমাত্র সরকারিভাবে কুষ্ঠ হাসপাতাল রয়েছে।
নীলফামারীর কুষ্ঠ হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের মোট ৪২ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট মঞ্জুরিকৃত পদটি শুন্য অবস্থায় রয়েছে। মেডিকেল অফিসারের ৩টি পদে কেউ নেই। লোকবল নেই একটি মাত্র কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদেও। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদটি শুন্য থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বন্ধ আছে।
এছাড়া, এই হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ রয়েছে ১৫টি। তাদের মধ্যে ৮ জন কর্মরত থাকলেও ৭ জনকেই প্রেষণে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও কিছু কর্মচারিকে প্রেষণে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে ৭ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।
হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী কবির হোসেন বলেন, “আগে আমরা তিনজন কাজ করেও সামাল দেওয়া যেত না। আর এখন তিনজনের কাজ আমাকে একাই করতে হয়।”
ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মচারি বলেন, “হাসপতালের রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা একেবারেই বন্ধ। জনবল না থাকায় ইনডোরের রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে।”
হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাওয়া-দাওয়ার কোনো সমস্যা না থাকলেও ডাক্তার-নার্সের সংখ্যা কম থাকায় প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না তারা।
সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমতাজ আলী প্রামাণিকের অভিযোগ, নামেই চলছে কুষ্ঠ হাসপাতালটির কার্যক্রম। জনবলের অভাবে রোগীরা সেবা পাচ্ছে না।
হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার ডা. ভির্জিনিয়া শুক্লা বিশ্বাস জানান, “আমি সম্প্রতি এই হাসপাতলে প্রেষণে যোগদান করেছি। তাই এসব বিষয় কিছুই জানি না।”
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (এমওসিএস) ও কুষ্ঠ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট-এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, “আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর সংখ্যা কম থাকায় কিছু জনবল সরিয়ে জেলার অন্যান্য হাসপাতালে প্রেষণে রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়লে তাদের পূনরায় কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা হবে।”
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির মুঠোফোনে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি সদ্য এই জেলায় দায়িত্ব পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে সমস্যার সমাধান করা হবে। জনবল সঙ্কট থাকলে তা কর্তৃপক্ষের নজরে এনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
মতামত দিন