মামলায় সংশ্লিষ্ট তিন এনজিও'র ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে
বগুড়ার শাজাহানপুরে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেয়ার ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ না করতে পেরে বেলাল হোসেন (২৮) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বেলালের স্ত্রী হাসিনা খাতুন বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) ১১ জনকে আসামি করে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতের বিচারক বিচারক খালিদ মাহমুদ, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে এই ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন - সাজেদা ফাউন্ডেশন মাঝিড়া শাখার ম্যানেজার মনিরুজ্জামান ও মাঠকর্মী মাজেদুল ইসলাম, রিয়েল সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড দুবলাগাড়ী শাখার ম্যানেজার ফরহাদ হোসেন ও মাঠকর্মী জেসমিন আকতার, সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিস নয়মাইল শাখার ম্যানেজার আমিরুল হাসান ও মাঠকর্মী মুঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এক্রটেনশন এডুকেশন সার্ভিসেস মাঝিড়া শাখার ম্যানেজার সাইদুর রহমান ও মাঠকর্মী লাকী খাতুন, সোশিও ইকোনোমিক ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন মাঝিড়া শাখার ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন এবং টিএমএসএস মাঝিড়া শাখার ম্যানেজার আব্দুল মান্নান ও মাঠকর্মী নাহার।
বাদীপক্ষের অ্যাডভোকেট রাশেদুর রহমান মরিস ও অন্যরা জানান, বেলাল হোসেনের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে। উপজেলার খোর্দ বৃ-কুষ্টিয়া এলাকায় তার ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ রয়েছে। উপরোক্ত ছয়টি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এ কারখানা চালু করেন। তবে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অন্যদের মত বেলালও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই পরিস্থিতিতে ১ অক্টোবর পর্যন্ত কিস্তি আদায় না করতে এনজিওগুলোকে নির্দেশ দেয় সরকার। এরপরও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এনজিওগুলোর কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কিস্তি আদায় অব্যাহত রাখে। এমনকি তারা কিস্তি পরিশোধের জন্য ঋণগ্রহীতাদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ব্যবসা মন্দা হওয়ায় বেলাল হোসেন তার কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এনজিওগুলোর লোকজন তার উপর চাপ সৃষ্টি করে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার কিস্তি পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। তিনি গ্রামের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার করার চেষ্টা করেও কিস্তির টাকা জোগাড় করতে পারেননি। পরে এনজিও কর্মীদের ভয়ে তিনি নিজ বাড়িতে প্রথমে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে লোহার রড কাটার ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন দেখতে পেয়ে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মৃত্যু হয় বেলালের।
এ ঘটনায় বেলালের স্ত্রী থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।
তবে, শাজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দিন মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, “এই ঘটনায় কেউ মামলা করতে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
মতামত দিন