সাম্প্রতিক বন্যায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি অর্থাভাবে মেরামত করতে পারেননি অনেক কৃষক সেখানে নতুন আবাদ করার মতো সামর্থ্যও নেই তাদের
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি আত্রাই নদীর সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে নওগাঁ শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রীজ পয়েন্টের পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে জেলার রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার নিমাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি এসব এলাকায় আবারও ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত। ফলে জেলার কয়েক লাখ বাসিন্দার মধ্যে আবারও বন্যাতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দুই দফায় দেড় মাসেরও বেশি সময় বন্যার সঙ্গে যুদ্ধের পর পানি নেমে গেলে সম্প্রতি জেলার প্রান্তিক কৃষকেরা চাষাবাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদ্য রোপণকৃত আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলার আত্রাই উপজেলার পাঁচটি স্থানে মান্দা-আত্রাই নদীর বেড়ীবাধঁ ভেঙে ৮টি ইউনিয়নের অর্ধ-শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে শত শত পুকরের মাছ ভেসে যায়। হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ফসলের ক্ষতি হয়। দ্বিতীয় দফায় আগস্টের শেষের দিকে আবারও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দেয়। এই অবস্থায় নদীর পানি কমে গেলে এবং লোকালয় থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
তবে এখন পর্যন্ত ফের বন্যার কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কিন্তু পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার আশঙ্কায় অনেক কৃষক শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করতে দ্বিধায় ভুগছেন। তাছাড়া যেখানে সাম্প্রতিক বন্যায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি অর্থাভাবে মেরামত করতে পারেননি অনেক কৃষক সেখানে নতুন আবাদ করার মতো সামর্থ্যও নেই তাদের।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, জেলার রাণীনগর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭৫০ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ১১৪৫ হেক্টর ও মান্দা উপজেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির আমন ধান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
কৃষি অফিস জানায়, গত বছর আমন চাষের মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চিনি আতপ ধানের চাষ হয়েছিল। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক লাভবানও হয়েছিল। এবারে আগাম বন্যার পানি মাঠে চলে আসায় আমনচাষ ব্যাহত হতে পারে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী বলেন, আমাদের বোরো ধান কেটে শেষ না করতেই মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পানিতে ভরে গেছে, জমির পানি একটু কমলেও আবারও বাড়ার কারণে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতেই পারলাম না। কিভাবে আমন চাষ করবো তা নিয়ে হতাশায় রয়েছি।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফউজ্জামান খান বলেন, “নওগাঁর আত্রাই নদীর সকল পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ছোট যমুনা নদীর পানিও বর্তমানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধগুলো পরিদর্শন করছি। চেষ্টা করছি যতটুকু মেরামত করা যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই-তিন দিন পানি আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।”
মতামত দিন