দফায় দফায় বন্যার পর বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকায় আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তীব্র নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক আবাদি জমি, বিভিন্ন স্থাপনা
বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকায় আবারও মতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তীব্র নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক আবাদি জমি, বিভিন্ন স্থাপনা। কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও হিমশিম খাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এক সপ্তাহ আগে উজানের ঢলে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে এর অববাহিকায় চতুর্থ দফা বন্যা পরিস্থিতি হয়। সেই পানি কমতে না কমতেই আবারও বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ধরলাসহ কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমার নদে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
পাউবো জানায়, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টায় সেতু পেয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদ-নদীর পানি বাড়লেও শুক্রবার বিকাল থেকে সামান্য কমতে শুরু করেছে।
জেলার নদ-নদী অববাহিকা অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার সদর উপজেলায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র, নাগেশ্বরীতে দুধকুমার, রৌমারী ও রাজীবপুরে ব্রহ্মপুত্র এবং উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ফসলি জমি হারানোর পাশাপাশি বসতভিটা হারাচ্ছেন নদী অববাহিকার বাসিন্দারা। গত কয়েক সপ্তাহে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা ও থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও মসজিদসহ ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবারসহ সড়ক ও ফসলি জমি। এ উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বাস্তুহারা হচ্ছেন শত শত পরিবার।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত দুই দিনে অন্তত ১৫টি পরিবার ভিটেহারা হয়েছে বলে জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার। ভাঙন কবলিতদের পুনর্বাসনে একাধিকবার তালিকা প্রেরণ করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান বলেন, “ধরলার পানি তীব্র বেগে প্রবেশ করে গত দুই দিনে ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামে অন্তত ১০-১৫টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। এছাড়াও খাসেরচর ও চরভগবতীপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার পঞ্চম দফায় ভাঙনে ভিটেহারা ৩৫ পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এদিকে নদ-নদীতে পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর আমন ও সবজি ক্ষেত। দ্রুত পানি সরে না গেলে এসব জমির ফসল পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কৃষক শামসুল হক জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আবারও বন্যা শুরু হয়েছে। কয়েক দফা রোপা আমন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পর আবারো তলিয়ে যাওয়ায় নতুন করে আর আমন লাগানো সম্ভব হবে না। এবার আমনে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানায়, উজানে ও স্থানীয়ভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দ্রুত পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “নদী ভাঙনে ভিটেহারাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ামাত্র ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। তবে দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা চলমান রয়েছে।”
এদিকে, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কুড়িগ্রামে অবস্থান করছেন।
মতামত দিন