বিক্ষুব্ধ এই কর্মসূচি হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও আনাস মাদানির ভেতরকার দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ
চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলামে (হাটহাজারি মাদ্রাসা) বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা।
ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসার শুরা কমিটি (সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরাম) বুধবার এক জরুরি সভা ডেকে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসার পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফির বড় ছেলে হলেন আনাস মাদানি।
হাটহাজারি মাদ্রাসার সহকারি পরিচালকের পাশাপাশি মৌলবাদী সংগঠনটির প্রচার সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন আনাস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা।
ওই নেতা বলেন, একরকম বাধ্য হয়েই ছেলের অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন শফি।
“আপনারা জানেন, বিশৃঙ্খলার ফলাফল ভালো হয় না। একদল বহিরাগত মাদ্রাসার ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।”
এদিকে, বুধবার হাটহাজারি মাদ্রাসার ভেতরে বিক্ষোভরত ছাত্ররা মারধর করেছে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দিন রুহানিকে।
আহতাবস্থায় মাইনুদ্দিন এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে, ওইদিন আনাস মাদানিকে অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে মাদ্রাসার কয়েকশত শিক্ষার্থী।
তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- আনাস কর্তৃক বহিষ্কৃত মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা, ছাত্রদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ, বয়োবৃদ্ধ শফির স্থলে মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে একজন দক্ষ পরিচালক নিয়োগ এবং শুরা কমিটির বিতর্কিত সদস্যদের অপসারণ।
বিক্ষোভরত ছাত্ররা মাদ্রাসার কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেছে।
বিক্ষুব্ধ এই কর্মসূচি হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও আনাস মাদানির ভেতরকার দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।
চলতি বছরের জুনে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহকারি পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পর এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা হাটহাজারি মাদ্রাসার মূল ফটক তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে-
মাদ্রাসার চারদিকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করছেন। যৌথ মহড়া দিচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদ্রাসার শাহী গেট শনিবার শুরার বৈঠক পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বড় মসজিদের গেটে কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করা হয়েছে। ছাত্ররা জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার সুযোগ পাবে, তবে ভর্তি রশিদ ব্যতীত বাইরে যাওয়া যাবে না। শনিবার পর্যন্ত কোনো বহিরাগত মাদ্রাসায় ঢুকতে পারবে না। সেইসঙ্গে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে মাদ্রাসার একাডেমিক সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত, হাটহাজারিতে প্রায় ৭ হাজার ছাত্র পড়াশোনা করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আল্লামা শফি। একইসঙ্গে তিন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান।
মতামত দিন