ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৪শ’ বর্গফুটের হোটেল মালিক এখন পাশের হোটেলের ১০ হাজার টাকার কর্মচারী
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি খাবারের হোটেল চালাতেন ৪৫ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করতেন তিনি। ব্যবসাটিকে আরেকটু প্রসারিত করার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কী ঘটতে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে।
করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ মাস থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাত্র দুইমাসের মধ্যেই ছয়বছরে গড়ে তোলা ৪শ’ বর্গফুটের হোটেলটি বন্ধ করে দিতে হয় হাবিবুর রহমানকে। শুধু তাই নয়, জীবিকার তাগিদে মাত্র ১০ হাজার টাকায় হোটেলটির ঠিক পাশেই, তার আরেক বন্ধুর একটি হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ নিতেও বাধ্য হন তিনি।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর, প্রথম ২ মাস ভাড়া ও বেতন বাবদ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু জুনে সব ছেড়ে দিতে বাধ্য হই।” এরইমধ্যে জমানো টাকাও যা ছিল, তাও শেষ বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসাটি শুরুর সময়ে গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। করোনভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এখন হাতে কোনও জমানো টাকাও নেই।”
হাবিবুর বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারি আসার আগে প্রতিমাসে সব খরচ বাদ দিয়েও ৪০ হাজার টাকার মতো আয় করতাম। ছেলেটা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো, পরিবার নিয়ে মোহাম্মদুপুরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম।”
ছেলের পড়াশোনা চালানোর আর কোনও চিন্তা করছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ১০ হাজার টাকা বেতনের এ চাকরি দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি, ছেলের পড়া চালাবো কীভাবে।”
বর্তমানে দিনের মধ্যে ১২ ঘণ্টাই হোটেলের কর্মচারী হিসেবে কাজ করা হাবিবুরের আশা, আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তিনি আবারও তার দোকান খুলতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে ছোট ও বড় প্রায় ৩০হাজারের মতো খাবারের হোটেল রয়েছে, কেবল ঢাকা শহরেই ৮হাজারেরও বেশি এ ধরনের হোটেল রয়েছে। বর্তমানে সবারই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
মতামত দিন