নিশাচর এই প্রাণীটি খাবারের সন্ধানে এক রাতে ৩ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়। বন বিড়াল ছোট পাখি, খরগোশ, গিরগিটি, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি ছাড়াও ইঁদুর, ও ধানক্ষেতের পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে
“বাঘ এসেছে”, “বাঘ দেখা গেছে”- এমন আতঙ্কের পর এলাকাবাসী যখন প্রাণীটিকে আটক করলো, তখন জানা গেল সেটি বাঘ নয়, বন বিড়াল।
রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শিবচন্ডি গ্রামের লোকজন ওই বন বিড়ালটিকে আটক করে। সীমান্তবর্তী চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকেরা প্রাণীটিকে মেছো বিড়াল মনে করে আটক করেছিল।
দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহসীন আলী জানান, শিবচন্ডি গ্রামের চা বাগানে শ্রমিকরা কাজ করছিল। এ সময় তাপস ও আলম নামে দুই শ্রমিক সেটিকে দেখতে পেয়ে অন্যান্য শ্রমিকদের বিষয়টি জানায়। এ সময় চা শ্রমিকদের মধ্যে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সবাই একত্রিত হয়ে প্রাণীটিকে আটক করে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইছামুলের বাড়ির সামনে একটি গাছের বেঁধে রাখা হয়। পরে বন বিভাগকে খবর দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বাঘ আটক হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে প্রাণী প্রাণীটিকে দেখার জন্য ভিড় করে শত শত উৎসুক জনতা।
আরও পড়ুন - সেই বন বিড়ালটি ফিরে গেলো বনে
তেঁতুলিয়া উপজেলা বন বিভাগের বন বিট কর্মকর্তা শহিদুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাণীটির ছবি দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রাণীটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, “ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি মেছো বাঘ নয়, এটি বন বিড়াল। বন বিড়ালটিকে দিনাজপুর নিয়ে আসা হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রাণীটিকে কোথায় রাখা হবে তা পরবর্তীতে জানানো হবে।”
প্রসঙ্গত, এর আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের মুহুরীজোত, সাহেবীজোত ও তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের উষা পাড়া ও বাদিয়াজোত এলাকার পরিত্যক্ত চা বাগান ও জঙ্গলে বাঘের আতঙ্ক বিরাজ করছিল। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তল্লাশি অভিযান ও জঙ্গল পরিষ্কার করলেও বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন - পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সজারু
বন বিড়াল সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, বন বিড়াল (Jungle cat) জংলি বিড়াল, খাগড়া বিড়াল বা জলাভূমির বিড়াল হিসেবে পরিচিত। মূলত গাছের কোটর, গুহা, জলাশয়ের ধারের ঝোপঝাড়, পুরনো ভাঙ্গা দালান-কোঠা ও গ্রামীণ বনে এরা বাস করে। এটি খুবই চালাক প্রকৃতির প্রাণী। মাটিতে যেমন দ্রুত দৌড়াতে পারে তেমনই গাছে ওঠা, বা সাঁতারেও খুব দক্ষ। নিশাচর এই প্রাণীটি খাবারের সন্ধানে এক রাতে ৩ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়। বন বিড়াল ছোট পাখি, খরগোশ, গিরগিটি, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি ছাড়াও ইঁদুর, ও ধানক্ষেতের পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। তবে এরা খাদ্যের অভাবে মাঝে মাঝে লোকালয়ে হানা দিয়ে কৃষকের হাঁস-মুরগিও খায়।
তিনি বলেন, “ব্যাপক নিধন ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বন বিড়াল বিপন্ন। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনবিড়ালকে “ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ” বলে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা, শিকার বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
আরও পড়ুন - মৌলভীবাজারে ‘আদালত’ বসিয়ে বানর হত্যা!
মতামত দিন