‘প্রেম করে চার বছর আগেই ভারতের দিল্লীতে আমরা বিয়ে করেছি। পরিবারের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে এসেছি। আমাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাই আমি এখানেই ঘর-সংসার করে থাকতে চাই’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ওবায়দুল হক চার বছর আগে ভারতে যান কাজ করতে। সেখানে প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে হয় উত্তর প্রদেশের ব্লাশপুর ছত্রিশগড় রাজ্যের মঙ্গলী জেলার জেড়াগাও থানার মৃত ফাগুরাম সাউ ও রাজকুমারী দম্পতির মেয়ে শ্রীমতি সুনিয়া সাউ (২৯) এর সাথে। বাংলাদেশি ও ভারতীয় এই দম্পতির সংসারে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। এরপর স্ত্রী-সন্তান রেখে দেশে ফেরেন ওবায়দুল।
এ ঘটনার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ওবায়দুল আর ফিরে যাননি ভারতে। ফিরবেন কেমন করে, বাংলাদেশেও যে তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় নারী সুনিয়া সাউ ছেলেকে নিয়ে পড়েন বিপাকে। সন্তানের পিতৃ পরিচয় আর সমাজের নানা প্রশ্নের জবাব মেলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর অধিকার আর সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে সীমান্ত পথে কোনও নিয়ম না মেনে অনুপ্রবেশ করেন বাংলাদেশে। প্রায় এক মাস ধরে ওই নারী সন্তানসহ বাংলাদেশে স্বামী ওবায়দুলের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
ওবাইদুল হকের বাড়ি উপজেলার সীমান্তঘেষা কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর চানদোলার পাড় গ্রামে।
ওবায়দুল জানান, গত ২৫ জুলাই দুই দেশের দালালের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত পেরিয়ে সন্তানসহ বাংলাদেশে আসেন সুনিয়া। স্থানীয়দের চোখের আড়ালে গত এক মাস ধরে তার বাড়িতে ঘর-সংসার করছেন তিনি।
ভারতীয় নারীকে বিয়ের কথা স্বীকার করে ওবাইদুল বলেন, “ভারতে কাজ করতে গিয়ে আমি বৈধভাবে ভারতে তাকে বিয়ে করেছি এবং আমাদের তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে।”
ভারতীয় ওই নারী বলেন, “প্রেম করে চার বছর আগেই ভারতের দিল্লীতে আমরা বিয়ে করেছি। পরিবারের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে এসেছি। আমাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাই আমি এখানেই ঘর-সংসার করে থাকতে চাই।”
স্থানীয় অধিবাসী আফজাল হোসেন, মতিয়ার রহমান ও সিরাজুল ইসলাম জানান, এক মাস ধরে ভারতীয় ওই নারী সন্তানসহ ওবায়দুলের বাড়িতে থাকলেও এতোদিন তা প্রকাশ পায়নি। ওবায়দুলের প্রথম স্ত্রী কল্পনা বেগম স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিয়ে এক মাস ধরে সংসার করলেও গত কয়েকদিন ধরে কল্পনা বেগমের সাথে স্বামী ওবাইদুল হকের বিবাদ হওয়ায় ভারতীয় নারীকে বিয়ের বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আর এতেই বাগড়া দেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। তারা ওই নারীকে তার সন্তানসহ বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতীয় ওই নারীকে তার সন্তানসহ বিজিবি ১৫ ব্যাটালিয়নের অনন্তপুর ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবি লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৌহিদুল আলম বলেন, “ওই নারী সীমান্তপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আমরা তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবো। পরে পুলিশ এবং আদালত তাদের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
মতামত দিন