বৃহস্পতিবার কয়রার প্রায় প্রতিটি ঘরে তিন থেকে চার ফুট পানি ওঠে। শুক্রবার পাঁচটি স্থানে রিংবাঁধ ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে স্থানীয় নদীগুলোতে বিপৎসীমার ৪ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে খুলনাসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকা বেড়ীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। এছাড়া পানিতে ভেসে গেছে হাজারো পুকুর ও মাছের ঘের, নষ্ট হয়ে গেছে রাস্তাঘাট, কাঁচা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষেত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, পশুর নদীতে বিপৎসীমা ২.৪৪ মিটার। কিন্তু এখন পানি প্রবাহ হচ্ছে ৩.৫৮ মিটার। যা বিপৎসীমার ১.১৪ মিটার (৪ ফুট) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর শিপসা নদীতে বিপৎসীমা ২.৫৯ মিটার। প্রবাহিত হচ্ছে ৩.৫০ মিটার। যা বিপৎসীমার প্রায় ১ মিটার ( প্রায় ৩ ফুট) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, অতি জোয়ারের কারণে রূপসা নদীতে বিপৎসীমার ২০-৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১ ফুট) ও ভদ্রা নদীতে বিপৎসীমার ৪০-৫০ সে মি (প্রায় ২ ফুট) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রা উপজেলাতে প্রতিদিনই জোয়ারের পানি বাড়ছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে রিংবাঁধ ডুবে গ্রামে পানি প্রবেশ করে। বৃহস্পতিবার কয়রার প্রায় প্রতিটি ঘরে তিন থেকে চার ফুট পানি ওঠে। শুক্রবার পাঁচটি স্থানে রিংবাঁধ ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা হরিণখোলা ও ঘাটাখালীতে কপোতাক্ষ নদের রিং বাঁধে পাঁচটি পয়েন্টে ৩০০ মিটার রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভগ্নস্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
গত ২০ মে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বেড়ীবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেলে ১টি ইউনিয়ন বাদে ৩টি ইউনিয়নের বেড়ীবাঁধের ভগ্নস্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়ে আটকানো সম্ভব হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় নদীর পানির প্রবল চাপে গত ২০ আগস্ট সকালের জোয়ারে উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা হরিনখোলা ও ঘাটাখালী রিংবাঁধের পাঁচটি স্থান ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করে। রিংবাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। ঢাকা ট্রিবিউন
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, “কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির প্রবল চাপে ২নং কয়রা হরিণখোলা ও ঘাটাখালী রিংবাঁধের পাঁচটি স্থানে ভেঙে লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এলাবাসীর সহযোগিতায় ভগ্ন রিংবাঁধ গুলো মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, “রিংবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর রিংবাঁধ মেরামতের জন্য পরামর্শের ভিত্তিতে সেখানে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছি। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।”
এদিকে, জোয়ারের পানির তোড়ে পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ উপচে পড়ছে ও বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পানির তোড়ে ১৮/১৯ নং পোল্ডারের লতার উত্তর কাঠামারীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ উপচে গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। জোয়ারেরর চাপে ওয়াপদার বাহির অংশে মৎস্য ঘেরে তলিয়ে বেড়ীবাঁধ উপচে পোল্ডার অভ্যন্তরে পানি ঢুকছে। অন্যদিকে ২০/১নং পোল্ডারের দেলুটির ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গড়ইখালীর ১০-১২ নং পোল্ডারের বাঁধ ভেঙে বাজার প্লাবিত হয়েছে। কুমখালীর ক্ষুতখালীতে বিপদজনক বেড়ীবাঁধে বালুর বস্তা ও মাটি ফেলা হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২০ (১) নং পোল্ডার বৃহস্পতিবারের অতি জোয়ারের পানির চাপে চকরি নদীর দক্ষিণ মাথার পূর্বপার ওয়াপদার পাশ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গেউয়াবুনিয়া, পারমধুখালী ও চকরি বকরি গ্রামের প্রায় ৭৫০ বিঘা জমির মাছ, ধানের পাতা, বসত বাড়ি, ইট সোলিং রাস্তা ও বেড়ীবাঁধ।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, “বেড়ীবাঁধ সংস্কার ও মানুষের জান-মাল রক্ষার্থে প্রশাসনের সব ধরনের প্রচেষ্টা আছে। শুক্রবার গড়ইখালী ও বেতবুনিয়ার বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে ওই এলাকার দুইটি গুচ্ছ গ্রামসহ ৩৫০ পরিবার পানি বন্দী হয়ে আছে।”
মতামত দিন