দুটি ছানা সাথে নিয়ে ভারত থেকে আসা ওই চিতাবাঘটি গত একমাস ধরে ওই চা বাগানে অবস্থান করছে
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের মুহুরীজোত ও সাহেবীজোত এলাকার চা বাগান ও জঙ্গল কাটতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। দুই বাচ্চাকে নিয়ে একটি চিতাবাঘ ঘাপটি মেরে আছে, এমন ধারণা থেকেই ওই চা বাগান ও জঙ্গল কাটা শুরু হয়।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) বন বিভাগের কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে চা বাগান ও জঙ্গল কাটার নির্দেশ দেয়।
সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান জানান, বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেন, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা, সদর ও তেঁতুলিয়া থানার ওসি আবু আককাছ আহমেদ ও মো. জহুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চা বাগান ও জঙ্গল কাটার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. মিন্টু কামাল ১৯ জন শ্রমিক লাগিয়েছেন। চা বাগান ও জঙ্গলটি খুবই ঘন হওয়ায় কাটতে সময় লাগছে। কবে নাগাদ কাটা শেষ হবে এটা বলা কঠিন।”
আরও পড়ুন - দুই ছানাসহ চা বাগানে লুকিয়ে দুটি বাঘ, আতঙ্কে এলাকাবাসী
তিনি আরও জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ও তার সমন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) রমজান আলীর সঙ্গে ওই চা বাগান নিয়ে ৭-৮ বছর ধরে আদালতে মামলা চলমান আছে। এ কারণে চা বাগান থেকে পাতা উত্তোলন না করা ও পরিচর্যার অভাবে বাগানটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
সাতমেরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. মিন্টু কামাল বলেন, “বাঘের আতঙ্কে আমার এলাকার লোকজন রাতজেগে পাহারা দিয়ে আসছেন। বাঘ ধরতে অভিযানের অংশ হিসেবে এই চা বাগান ও জঙ্গল কাটা শুরু হয়েছে। বাগানের দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রশাসনের নির্দেশে এটি কাটা হচ্ছে।”
বাঘের পায়ের ছাপ। ঢাকা ট্রিবিউন
উল্লেখ্য, দুটি ছানা সাথে নিয়ে ভারত থেকে আসা একটি চিতাবাঘ গত একমাস ধরে পঞ্চগড় সদর উপজেলা ও তেুতুঁলিয়ার সাতমেরা ইউনিয়নের ওই চা বাগানে অবস্থান করছে। বাঘগুলো স্থানীয়দের ছাগল-গরুকে আক্রমণও করেছে। এলাকাবাসী বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন ও গন্ধ অনুভব করতে পারছেন। বনবিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে বাঘ একটি গরুকে হত্যা করেছে। জেলা বন কর্মকর্তাকে বাঘ ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে চার সদস্যের একটি অভিজ্ঞ টিম পাঠানো হয়েছে। তবে বাঘগুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বাঘগুলোর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে বাঘগুলোকে জীবিত অবস্থায় ধরতে।”
আরও পড়ুন - ভাইরাল হওয়া প্রাণীটি চিতাবাঘ নয়, চিতা বিড়ালের বাচ্চা
চিতাবাঘ সম্পর্কে বন বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এক সময় সারা দেশই চিতাবাঘের (Leopard) অবাধ বিচরণক্ষেত্র ছিল। ১৯৭০ এর দশকেও চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারের পাহাড়ি বনাঞ্চল ছিল চিতাবাঘের স্বর্গরাজ্য। এমনকি ১৯৫০ সালেও ঢাকার মিরপুর ও উত্তরা অঞ্চল এবং মধুপুর বনাঞ্চলে চিতাবাঘের উপস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস, শিকারের অভাব আর চোরাশিকারের ফলে এই বন্যপ্রাণীটি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) চিতাবাঘকে সারা পৃথিবীতে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। দেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া চিতা বাঘের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, পঞ্চগড় সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের শিলিগুড়ি, বিহাননগর, জলপাইগুড়ির বনাঞ্চলে এখনও চিতাবাঘ টিকে আছে। এই বাঘই কোনো কারণে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। বাঘটিকে জীবিত ধরতে চেষ্টা করছে বন বিভাগ।”
আরও পড়ুন - পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা
মতামত দিন