ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তায় তার বাবা ও মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন
বগুড়ার ধুনটে বিয়ের প্রলোভন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে শাহীন নামে এক ব্যক্তি কলেজছাত্রীর পরিবারের কাছে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার ওই ছাত্রী শনিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে ধুনট থানায় শাহীন ও বিয়ের ঘটক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, ধুনটের পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর মেয়ে রোজিনা আকতার ধুনট মহিলা কলেজের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। কাজের সুবাদে রমজান আলীর সঙ্গে উল্লাপাড়া গ্রামের ঘটক শহিদুল ইসলামের পরিচয় হয়। তিনি তার মেয়ের জন্য একটা ভাল পাত্র দিতে ঘটককে অনুরোধ করেন। ওই ঘটক শাহীন (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে পাত্র সাজিয়ে রোজিনাকে দেখতে নিয়ে যান। উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়।
এর আগেই হবু বর শাহীন মেয়েটিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) অফিস সহকারি পদে চাকরির প্রলোভন দেখান। বিনিময়ে অফিস খরচ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। সরকারি চাকরির আশায় রমজান আলী গত বছরের ২৭ নভেম্বর বাড়ির গরু, ছাগল বিক্রি করে ঘটক শহিদুল ও শাহীনের হাতে এক লাখ টাকা দেন।
আরও টাকার চাপ দিলে পরিবারটি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেন। তিনি বিকাশ, ডাচবাংলা ব্যাংক হিসাব ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শাহীনকে তার রাজধানীর মিরপুরের ঠিকানায় আরও চার লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
চলতি বছরের ২৪ মার্চ ধুনট পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রোজিনার ঠিকানায় পাউবোর কর্মচারি পরিদপ্তরের পরিচালক আসাদুজ্জামান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র পাঠান শাহীন। গত ১৫ মার্চ স্বাক্ষরিত ওই নিয়োগপত্রে (স্মারক নং-১০২২-পাউবো (কউ)/এ-১ (২য় খণ্ড) রোজিনাক দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগ, পাউবো, ফরিদপুর উল্লেখ করা হয়।
রোজিনা নিয়োগপত্র নিয়ে বগুড়া পাউবো অফিসে গেলে কর্মকর্তারা এটি ভুয়া বলে জানিয়ে দেন।
এদিকে, নিয়োগপত্র পাঠানোর পর থেকে শাহীন তার (রোজিনা) সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
বাধ্য হয়ে রোজিনা আকতার শনিবার বিকালে ঘটক শহিদুল ইসলাম ও প্রতারক শাহীনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি জানান, বিয়ের প্রলোভন ও সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারকরা তাদের কাছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তায় তার বাবা ও মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি প্রতারকদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, কলেজ ছাত্রীর অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করা হবে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, এমন প্রতারণার ঘটনার অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতামত দিন