তিতাস সেতু এলাকার মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরে বালু রেখে ব্যবসা করে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাহিদ সোহাগ ও তার দুই সহযোগী
ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক মহাসড়কে অবৈধভাবে রাখা বালুর স্তুপের চাপে মহাসড়কের একাংশ (১২০ ফুট) রাস্তা ধসে তিতাস নদীতে নিমজ্জিত হয়েছে। গত ১২ জুলাই, রবিবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার তিতাস সেতু এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার পর সোমবার (১৩ জুলাই) স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের নির্দেশে তিন বালু ব্যবসায়ী আটক করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে রাতে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে সড়ক পুনর্নির্মাণের শর্তে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ীরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলার বাসুদেব গ্রামের বাসিন্দা আবু নাহিদ সোহাগ (৩৮), তার সহযোগী কোড্ডা গ্রামের শানু খলিফা (৪৫) ও আখাউড়া পৌর এলাকার রাধানগর গ্রামের হাসান খলিফা (৩২)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-আগরতলা আন্ত:জার্তিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার তিতাস সেতু এলাকার মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরে বালু রেখে ব্যবসা করে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাহিদ সোহাগ ও তার দুই সহযোগী।
ক্রমাগত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পানির তীব্র চাপে ঢাকা-আগরতলা আন্তজার্তিক মহাসড়কের প্রায় ১২০ ফুট সড়ক ধ্বসে তিতাস নদীতে নিমজ্জিত হয়। এতে ওই সড়কে যান চালাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বিষয়টি নজরে এলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) ব্যবস্থা নিতে বলেন। মন্ত্রীর নির্দেশে ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা সোমবার অভিযুক্তদের ডেকে পাঠান।
পরে তাদেরকে সন্ধ্যায় আখাউড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাত ১১টার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনার পর ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই টাকায় সড়কটি মেরামত কাজ করবেন বলে কাগজে পত্রে স্বাক্ষর রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাহিদ সোহাগ বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা বলে আমাদেরকে ডেকে নেন আখাউড়া ইউএনও। এক পর্যায়ে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। আমরা চেয়েছিলাম সড়কটি মেরামত করে দিতে। ধারণা ছিলো চার-পাঁচ লাখ টাকার মতো লাগবে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি মেরামতে ১৭ লাখ টাকা লাগবে বলে একটি বাজেট তুলে ধরেন। জানানো হয় ওই টাকা আমাদেরকে দিতে হবে। সড়ক মেরামতের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমাদের বালুগুলোই সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে।”
তবে পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মূলত শুধু বালু রাখার জন্য নয়, সঠিকভাবে সড়কটির নির্মাণ কাজ না করা ও বৃষ্টির পানির কারণে সড়কের একপাশ ধসে পড়ে। কিন্তু এখন সমস্ত দোষ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হব।”
আখাউড়া ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, আন্তর্জাতিক মহাসড়ক ভাঙার খবর পাওয়া মাত্রই সড়কের পাশ ঘেঁষে থাকা বালু সরিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ঠিকাদারেরা ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। মেরামত কাজটিও করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তাদেরকে আটক করা হয়েছিল। পরে রাতে সড়ক নির্মাণের শর্তে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মতামত দিন