ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ধেয়ে আসা পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
১৯৯০ সালের পর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা নদীর তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার অতীতের ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এতে তিস্তা অববাহিকায় প্রবল বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
গত রবিবার (১২ জুলাই) রাত ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে রাত ১০টায় একই পয়েন্টে তিস্তার নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় একই পয়েন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিপৎসীমা অতিক্রমের রেকর্ড।
২০১৯ সালের ১৩ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এ অবস্থায় জেলায় তীব্র বন্যায় প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারি হিসেবে এর পরিমাণ ২১ হাজার। অন্যদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে হাতীবান্ধা উপজেলায় গড্ডিমারী ইউনিয়নের আরিফা আক্তার নামে ৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে এমন ফুলে ফেপে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ রবিবার রাতে বিশেষ সতর্কতা জারি করে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতেও মাইকিং করা হয়েছে।
এছাড়া, হাতীবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়কে পানির চাপ ঠেকাতে এলাকার লোকজন বালির বস্তা ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আদিতমারীতে একটি বালুর বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত আছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে সোমবার(১৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল ৬টায় বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো।
এদিকে, জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি পানিবৃদ্ধি পেয়ে তীব্র বন্যার সৃষ্টি হয়। তিস্তার পর ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। সদর উপজেলার মোগলহাটের শিমুলবাড়ি পয়েন্টে সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে আতংকিত হয়ে পড়ছে লালমনিরহাট শহরের লোকজন। ধরলার এমন অস্বাভাবিক পানি বৃদ্বিতে সদর উপজেলার মোগলহাট, বড়বাড়ী, কুলাঘাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ধেয়ে আসা পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও সদর উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বানভাসী এসব মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানান, শুধু তার ইউনিয়নেই ১০ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, “পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ৩৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, “পানিবন্দি এলাকার মানুষের জন্য ২৪৩ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ সতেরো লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণের কাজ অব্যাহত আছে।”
মতামত দিন