গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সেটি কাটার জন্য জোর চেষ্টা করছেন দুই ইউপি সদস্য
গাছটির বয়স আনুমানিক ৫০০ বছর। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে গাছটির একটি ডালও ভেঙ্গে পড়েনি, নেই কোনো শুকনো ডালপালাও। এই গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে কোনো ব্যক্তির হতাহতের ঘটনাও কখনো ঘটেনি। কিন্তু গাছটিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সেটি কাটার জন্য জোর চেষ্টা করছেন দুই ইউপি সদস্য। তবে তা ঠেকাতে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি- কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নান (৬০) নামের এক বৃদ্ধ।
সম্প্রতি বালিয়াডাঙ্গা বাজারের একটি তেঁতুল গাছ কাটার বিষয়ে দুই ইউপি সদস্যসহ কিছু মানুষের অপতৎপরতার বিষয়ে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের এই তেঁতুল গাছটি আমাদের ঐতিহ্য। বাজারের সবকিছু এই গাছকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। গাছের তলায় সপ্তাহে দুইদিন বাজার বসে। এছাড়াও প্রচণ্ড খরায় এই গাছই আমাদের ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। এই গাছের নিচেই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে দোকানদারি করছি। এই তেঁতুল গাছের দ্বারা কোনোদিন ক্ষতি হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন গাছটিকে বিপজ্জনক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখিয়ে আনুমানিক ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছটি কর্তনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেন ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ৭নং ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও ৮নং ইউপি সদস্য কে.এম শামছুল হক। এছাড়াও গ্রামবাসীর পক্ষে অনেকে স্বাক্ষর করেছেন। আর এই আবেদনপত্রে জোর সুপারিশ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সানা।
বুধবার (২৪ জুন) সকালে বালিয়াডাঙ্গা বাজারে গিয়ে কথা হয় গ্রামের প্রায় ৩০ জন ব্যক্তির সাথে। গাছ কাটার খবরে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, বাজারের হাট-চান্দি (ছাউনি) নির্মাণের জন্য আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। গাছ কাঁটার ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
এ সময় তারা সকলেই গাছটি না কাটার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধের পাশাপাশি গণস্বাক্ষর করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পল্লী চিকিৎসক ডা. সিদ্দিকুর রহমান (৬৫) জানান, গ্রামবাসী ও বাজারের শতকরা ৯৫ মানুষ গাছটি না কাটার পক্ষে। গাছ কেটে হাট চান্দি নির্মাণ না করে বাজারের পাশের সরকারি জমিতে অনেক দোকান আছে, সেগুলো উচ্ছেদ করলেই বড় হাট চান্দি নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তাই প্রায় ৫০০ বছর বয়সী এই গাছটি কাটার দরকার নেই।
সুলতান আহমেদ নামের এক যুবক বলেন, এই গাছটি বাজারের ঐতিহ্য। গাছটি বাঁচাতে জীবন দিতে রাজি আছি।
৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সানা বলেন, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পুরাতন তেঁতুল গাছটি কাটার ব্যাপারে একটি দরখাস্ত ইউএনওকে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী যদি না চায় তাহলে গাছ কাটা হবে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, “বালিয়াডাঙ্গা বাজারের গাছটি কাটার ব্যাপারে এখনো কোনো আবেদন আমি পাইনি।”
মতামত দিন