‘স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভাঙন কবলিত স্থানে বালির বস্তা দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখন ঝড় শুরু হয়ে গেছে, আর কাজ করা সম্ভব না। রাতে পুরো ঝড় আসলে কী হবে আল্লাহ জানেন’
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের অগ্রভাগ সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে এরইমধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ীবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে উত্তাল জোয়ারে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, বিকেলের দিকে শ্যামনগরের ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় পাউবো বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী, গাগড়ামারী, জেলিয়াখালী, নেবুবুনিয়া, গাবুরা বাজার, খোলপেটুয়া ও ৯নং সোরা এলাকায় অধিকাংশ পাউবো বাঁধ খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীতে ধ্বসে গেছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম বলেন, “প্রবল জোয়ারের ফলে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভাঙন কবলিত স্থানে বালির বস্তা দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখন ঝড় শুরু হয়ে গেছে, আর কাজ করা সম্ভব না। রাতে পুরো ঝড় আসলে কী হবে আল্লাহ জানেন।”
কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রউফ বলেন, “ইউনিয়নের ঝাপালি নামক স্থানে পাউবো বাঁধে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।”
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, “ইউনিয়নের দূর্গাবাটী ও দাতিনাখালীতে বিভিন্ন স্থানে পাউবো বাঁধ চুনা নদীতে ধ্বসে পড়েছে। নদীতে বড় ঢেউ আসছে সেটা প্রবেশ করে কিছু ঘেরে। ঝড় শুরু হয়ে গেছে যে কোনো সময় প্রবল জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সমগ্র ইউনিয়ন তলিয়ে মৎস্য ঘেরসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।”
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, ইউনিয়নের কামালকাটি, পূর্বপাতাখালী, চাউলখোলা ও চন্ডিপুরে পাউবো বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাউবো বাঁধের ব্লক নদীতে ধ্বসে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় নদীতে ঢেউয়ের তোড়ে পাউবো বাঁধ বিলীন হয়ে ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, বুধবার বিকাল ৪টায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের অগ্রভাগ সাতক্ষীরা সুন্দরবন উপকূলে প্রবেশ করেছে। এটা ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকবে। সাতক্ষীরা শহরে বিকাল ৫টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে প্রতি প্রতি ঘণ্টায় ঝড়োবাতাস বয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঝড়টি ইতোমধ্যে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হেনেছে।
শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী ক্ষতিগ্রস্থ পাউবো পরিদর্শন শেষে বলেন, “পাউবো কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ভাঙন মেরামতের জন্য বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়ে ভাঙন মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সার্বিক বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) রাশিদুল ইসলাম বলেন, “উপজেলা ব্যপী ২২০.৫০ কিলোমিটার পাউবো বাঁধের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার অধিক ঝূকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ জিও ব্যাগ ও সিনথেটিভ ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।”
মতামত দিন