এই ছুটির সময়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত এমনকি শহরের মধ্যে চলাচলও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবং ক্রমাগত প্রাণহানির মুখে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান সাধারণ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ১৪ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
গত ২৩ শে মার্চ, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ও চতুর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নত না হওয়ায় ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার।
নতুন করে দেওয়া নির্দেশনায় জানানো হয়, ২১ মে শবে-ই-কদরের ছুটি, ২২-২৩ মে এবং ২৯-৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪, ২৫ এবং ২৬ মে ঈদুল ফিতরের ছুটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
মানতে হবে যেসব বিধি-নিষেধ
ছুটির সময়ে জনগণের চলাচল এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলা ও এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যানবাহন চলাচলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “কেনা বেচার সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করার পরে দোকানগুলো খোলা থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।”
বিভিন্ন জরুরি পরিষেবাগুলোতে নিযুক্ত যানবাহন এবং শ্রমিক ছুটির বাইরে থাকবে। এছাড়াও পণ্যবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে যথারীতি চলাচল করতে দেয়া হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়, যারা কৃষি পণ্য, কীটনাশক, খাবার, শিল্পজাত পণ্য, কাঁচাবাজার এবং ফার্মাসিসের প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত আছেন তারা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী পরিবহনের যানবাহন এবং মিডিয়াকর্মীরা সাধারণ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুন - গণপরিবহন বন্ধ থাকবে ৩০ মে পর্যন্ত
এতে জনগণকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে থাকতে এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিংয়ের সময় সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরকার কর্তৃক জারি করা ১৩টি নির্দেশনা অনুসরণ এবং ঈদের ছুটিতে স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সকল আন্তঃজেলা পরিবহন ছুটির দিনে স্থগিত থাকবে।
ঈদের জামাতের ক্ষেত্রে সবাইকে বড় জামাত এড়িয়ে চলা এবং মসজিদে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে জারি করা নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে প্রথম দফার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ছুটি কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটির কারণে সারাদেশে সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গত ১০ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে শপিং মল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও কিছু অফিসও এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০৪১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং আরও ১৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৭ হাজার ৮৩৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ৭ হাজার ৩৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ভাইরাসে নতুন করে ১০৪১ জন শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ হাজার ৮৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আরও ১৪ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৩ জনে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম চীন থেকে সংক্রমণ শুরুর পর করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত ছড়িয়েছে বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে।
মতামত দিন