অর্থাভাবে সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষ। উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের আওয়ালীকান্দা ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদীর পাশ্ববর্তী মানুষের চলাচলে ভরসা একটিমাত্র বাঁশের সাঁকো। কিন্তু সেই সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাড়ে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা অন্যপাড়ে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা। নদে সেতু না থাকায় বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ, আওয়ালীকান্দা, দীঘলদীকান্দা, জহুরিয়াকান্দা, কাশিমনগর, তালতলা গ্রাম এবং কুলিয়ারচর উপজেলার আলিনগর, নলবাইদ, ফরিদপুর, নাপিতেরচর, সালুয়া গ্রামসহ ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী ১৫ গ্রামের লাখো মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরও এখানে সেতু তৈরি না হওয়ায় গ্রামবাসী মিলে বাঁশ, স্বেচ্ছাশ্রম ও ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকোটি তৈরি করেন। একই সাথে স্থানীয়দের অর্থায়নে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোর সাথে একটি সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছর ভালো গেলেও এখন অর্থের অভাবে বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করা যাচ্ছে না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন পারপার করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এছাড়া পণ্য পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যার কারণে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান। এলাকাবাসীর দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে ১৫ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হবে।
বাঁশের সাঁকো নির্মাতাদের একজন আকিবুল হাসান বলেন, দুই বছর আগে সকলের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এলাকার যুবকদের নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করি। বর্তমানে অর্থকষ্টে সেতুটি মেরামত করতে পারছি না।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ফরহাদ রেজা, শাহীন, আবু জাফর, সুমাইয়া, রিমা আক্তার জানান, সেতু না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন নদ পারাপার হয়ে স্কুল কলেজে যেতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
কুলিয়ার চরের ফরিদপুর ইউনিয় হামিদ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, “আওয়ালীকান্দা গ্রাম হতে শতাধিক শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পাড়ি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আমার স্কুলে আসে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীই নয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উপকার হবে। পাল্টে যাবে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র।”
ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্ম্দ শাহ আলম বলেন, “বাঁশের সাঁকোটি যারা তৈরি করেছেন তারা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন ও কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাঁড়ের লক্ষাধিক জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।”
বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, “বাঁশের সাঁকোটি যেদিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর পাশেই একটি খেয়াঘাট আছে। সেখানে যদি একটি সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে কমপক্ষে ১৫ গ্রামবাসীর উপকারে আসবে। আমি এখানে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
যোগাযোগ করা হলে বেলাব উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, “বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয় এটা দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। এখানে যাতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে আমি ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করব।”
মতামত দিন