৫৩% উত্তরদাতা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক তথ্য ও লক্ষণ সম্পর্কেই অবগত নন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৪৯% নিম্নবিত্ত মানুষের। এছাড়া করোনাভাইরাসের বিষয়ে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সেবা সর্ম্পকে কিছুই জানে না ৭৪% মানুষ।
বেসরকারি সংস্থা “কোস্ট ট্রাস্ট”-এর করোনাভাইরাসের বিষয়ে উপকূলের মানুষের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও ভোলা জেলায় দৈবচয়নের মাধ্যমে বাছাইকৃত নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে জরিপটি করে কোস্ট ট্রাস্টের পরিবীক্ষণ ও গবেষণা বিভাগ।
জরিপের উত্তরদাতাদের ৪৭% নারী ও পুরুষ ৫৩% ছিলেন। উত্তরদাতা নারীদের ৮০% গৃহিনী ও বাকিরা শিক্ষার্থী বা পড়াশোনার বাইরে থাকা কিশোরী ও বৃদ্ধা। এ ছাড়াও ১০% কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন ১৮%, ক্ষুদ্র বাবসায়ী ১৯% এবং ১৩% জেলে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রভাবিত কক্সবাজার, দ্বীপ জেলা ভোলা এবং বিচ্ছিন্ন চর হিসেবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও ভোলার চর মোতাহার বাছাই করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, ৪৯% উত্তরদাতা হাত ধোয়ার মৌলিক বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানেন না। ৪৩% উত্তরদাতা বলেছেন, তারা হাত ধোয়ার বিষয়টি মেনে চলতে পারছেন না।
এছাড়া, করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়ায় এমন প্রশ্নের উত্তরে দেখা যায় ২৬% মানুষের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ৫৩% উত্তরদাতা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক তথ্য ও লক্ষণ সম্পর্কেই অবগত নন।
অন্যদিকে, হাঁচি বা কাশি দেবার শিষ্টাচার সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে দেখা যায়, ৬৪% উত্তরদাতা টিস্যু বা রুমাল অথবা কনুইয়ের ভাঁজের কথা উল্লেখ করেন। বাকি ৩৬% উত্তরদাতা এ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানেন না।
অন্যদিকে, প্রায় শতভাগ গৃহিনী উত্তরদাতা জানান, তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা বিষয়ক তথ্য সরাসরি পাননি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যারা বাইরে যান, তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জেনেছেন।
জরিপে দেখা যায়, উপকূলের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ঘরে থাকা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। ৩৭% উত্তরদাতা বলেছেন, তারা বাজার করার জন্য এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পর পর বাইরে যান। বাকি ৬৩% একদিন বা দুই দিন পর পর বাজারে যান। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্পর্কে ধারণা নেই ২৪% উত্তরদাতার। ৬৬% উত্তরদাতা বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে তাদের এলাকার মসজিদে নিয়মিত মুসল্লির সংখ্যা কমেছে। ২৮% উত্তরদাতা বলেছেন, মসজিদে সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ৫৬% উত্তরদাতা হোম কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানেন না বা ভুল জানেন। মাস্ক কেন ব্যবহার করতে হয় এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই ১৩%।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে কোস্ট ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে সহজলভ্য মাস্কের দাম ৩০-৪০ টাকা, যা চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়সাধ্যের অতীত। এছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিদিনই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হচ্ছে। বরং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা বন্ধ থাকায় তারা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না।
জরিপের ভিত্তিতে কোস্ট ট্রাস্ট থেকে ১১টি সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ হচ্ছে, উপকূলীয় জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সেবা বাড়াতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সকল বেসরকারি সংস্থাকে প্রচারণার কাজে যুক্ত করতে হবে। জনমনে সরকারি তথ্য সম্পর্কে আস্থা বাড়াতে হবে। যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে ক্ষুদ্র ও কৃষি উদ্যোক্তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাবার জন্য তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের পণ্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এটি সারা দেশের ভোক্তাদের জন্য জরুরি। এছাড়া, প্রচারণার কাজে ধর্মীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত বলেও মনে করে কোস্ট ট্রাস্ট।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উপকূলের দরিদ্র মানুষ কিভাবে সম্পূর্ণ অজানা এই বিপর্যয় মোকাবিলা করছে তা জানার জন্যই কোস্ট ট্রাস্ট এই গবেষণা করেছে। ২৫০ জনের উপর এই জরিপটি পরিচালানা করা হয়েছে। জরিপটির ২৫০ জনের বক্তব্যের মধ্যেই উপকূলের চিত্র চলে এসেছে।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট উপকূলীয় মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে ১৯৯৮ সাল থেকে কাজ করে আসছে।
মতামত দিন