বুধবার সকালে ওই নারীর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিষয়টি জানান
সম্প্রতি ঢাকার সাভারে আঠারো মাসের শিশু সন্তানের জন্য খাবার কিনতে মাথার চুল বিক্রি করে দেন সাথী বেগম নামে এক নারী। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় ওই নারীর ভাড়া বাড়িতে গেলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানান।
আগেরদিন (মঙ্গলবার) রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ-আল মাহফুজ সাংবাদিকদের জানান, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে ও আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, পরিবারটির সবাই না খেয়ে ছিলেন কয়েকদিন। পরে শিশু সন্তানের জন্য দুধ কিনতে নিজের মাথার চুল কেটে সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন।
"বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।"
প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তিনি জানান, খবর পেয়ে রাতেই ওই বাড়িতে গিয়ে সাথী বেগমের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনিও নগদ টাকাসহ খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- শিশুর খাবার কিনতে নিজের চুল বিক্রি করে দিলেন মা
সাথীর প্রতিবেশী এক নারী বলেন, “সে (সাথী) দেড় মাস আগে এই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে। তখন তার মাথাভর্তি চুল ছিল। কয়েকদিন আগে সে বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে চুল কেটে বিক্রি করেছে। আমি নিজেও দেখেছি সেটি।”
এদিকে, বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার রাতেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমান অভি এক বস্তা চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় দেড় মাসের বাজার ওই পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। সহায়তা করা হয় স্থানীয় রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও।
বুধবার সকাল থেকে সাভারের আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ অভাবের তাড়নায় ওই নারীর চুল কেটে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটিকে “মিথ্যা” বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে শুরু করেন।
সকালে সরেজমিনে সাথী বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি অভিযোগ করে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “কয়েকজন নেতা এসে বলে গেছেন, ‘তুমি তিন মাস আগে চুল কেটেছো এখন মিথ্যে বলছো কেন?’ অথচ আমি চুল কেটেছি করোনা (সাধারণ ছুটি) শুরু হওয়ার পর।”
ওই নারীর ভাষ্যমতে এক নেতা তাকে বলেন, “দেড় মাস আগে চুল কেটেছো ওই সময় তো কোনো করোনা ছিলো না। তুমি মিথ্যে কথা বলে টাকা খাওয়ার জন্য এরকম করেছো। সতর্ক করে দেওয়া হলো, এ বিষয়ে কাউকে আর কিছু বলবে না।”
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি, “সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বক্তব্য দেবেন না” বলে জানিয়ে দেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, “একজন নারী খুব অসহায় অবস্থায় না পড়লে নিজের মাথার চুল কেটে বিক্রি করে না। এই পরিস্থিতিতে সবার উচিৎ তাকে সহায়তা করা।”
তিনি বলেন, এমন ভয়ভীতি দেখানো অন্যায়।
পৌরসভার মেয়রের যথেষ্ট ফান্ড আছে উল্লেখ করে হাসিনা দৌলা আরও বলেন, “মেয়রের বাড়ির পাশের এলাকায় কীভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটে? এটি মেয়রের ব্যর্থতা।”
বিষয়টি নিয়ে নিজ দলেরই কিছু নেতার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে যেতে পারতেন।
মতামত দিন