করোনাভাইরাসের কারণে সপ্তাহব্যাপী লক ডাউনে ঘরে অবস্থান করছে সবাই। তাই ঘরে মজুদ খাদ্য সামগ্রী ইতোমধ্যেই ফুরিয়েছে। কিন্তু কোনোপ্রকার সরকারি-বেসরকারি সাহায্য এখনও পৌঁছেনি সেখানে।
“আমরা দিনে এনে দিন খায়, দিন মজুরি করে কোনো রকমে বেঁচে আছি। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর কথা কানে শুনেছি কিন্তু বাস্তবে আমরা পাইনি। আমাদের পাড়ায় কবে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী দেবে কেউ জানে না। আমরা পথ চেয়ে রয়েছি গত এক সপ্তাহ ধরে, কিন্তু কেউ ত্রাণ দিতে আসেনি”- আকুতির সুরে এমন কথা বলছিলেন বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরের ৪ নং ওয়ার্ডের নাইন্দারী পাড়ার এক নারী। এই মন্তব্যের মাধ্যমেই পাড়াটিতে বসবাসরত ৪৮টি পরিবারের যাপিত জীবণের করুণচিত্র ফুটে ওঠে। গত ৬ দিন ধরে করোনাভাইরাসের সচেতনতা জন্য সরকারের লক ডাউন ঘোষনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এই পাড়ার অধিকাংশ পরিবার।
একই কথা জানালেন থানচির আমতলী পাড়ার ৩০টি পরিবার ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পুরাতন নাইন্দারী পাড়া ৩৬টি পরিবারের লোকজন। শত বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল থানচি সদর ইউনিয়নের নাইন্দারী পাড়া। পাড়াটিতে অধিকাংশ মানুষ এখনও হতদরিদ্র দিন মজুর, ছোট ছোট ঘরেই তাদের বসবাস।
নাইন্দারী পাড়া বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য প্রবীণ এই চথোয়াইউ মারমা (৬৫) বলেন, আমাদের নাইন্দারী পাড়া ৫০/৫২ পরিবারের মধ্যে বিধবা রয়েছে ১০টি পরিবার ও হতদরিদ্র ২০ পরিবার। এছাড়া মাত্র ১০টি পরিবার স্বাবলম্বী। কিন্তু সবাই গরীব ও দিন মজুর। করোনাভাইরাসের কারণে সপ্তাহব্যাপী লক ডাউনে ঘরে অবস্থান করছে সবাই। তাই ঘরে মজুদ খাদ্য সামগ্রী ইতোমধ্যেই ফুরিয়েছে। কিন্তু কোনোপ্রকার সরকারি-বেসরকারি সাহায্য এখনও পৌঁছেনি সেখানে।
পুরাতন নাইন্দারী পাড়া বাসিন্দা বাথোয়াইচিং মারমা (৫৫) ও থোয়াইনু মারমা (৫৬) বলেন, আমাদের পাড়ায় ৩৬ পরিবারে মধ্যে ২০ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে, এখনও এখানে ত্রাণসামগ্রী দেয়নি কেউ।
আমতলী পাড়া নিবাসী দিন মজুর উচিংমং মারমা বলেন, আমাদের পাড়ায় বাঙ্গালীসহ ৩০টি পরিবার রয়েছে, ৩/৪টি পরিবার স্বাবলম্বী হলেও বাকিরা সবাই দিন মজুরি করে সংসার চালায়, বর্তমানে তারা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে গত ২৬ মার্চ ৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন এবং ২৯ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ফাউন্ডেশন হতে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আরিফুল হক মৃদুল বলেন, “প্রশাসনে হাতে যে বরাদ্ধ ছিল তা সম্পূর্ণ শেষ, ফের তিন মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ পেয়েছি সেটি প্যাকেট করা হচ্ছে ক্রমন্বয়ে বিতরণ করা হবে।”
মতামত দিন