‘বাংলাদেশে এই মহামারির চরিত্র অনুধাবনের ক্ষেত্রে আগামী কিছুদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দেশব্যাপী এই ছুটির মেয়াদ কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো উচিত’
করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব মোকাবিলায় চলমান সাধারণ ছুটির মেয়াদ কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জাহিদ হক।
সোমবার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সঙ্গে আলাপকালে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহিদ হক এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
ডা. জাহিদ হক বলেন, “বাংলাদেশে এই মহামারির চরিত্র অনুধাবনের ক্ষেত্রে আগামী কিছুদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দেশব্যাপী এই ছুটির মেয়াদ কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো উচিত।”
তার মতে, কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেশব্যাপী ১০ দিনের ছুটির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “ভাইরাসের বিস্তার হ্রাস করার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বকে বজায় রাখা সফল করতে সেনা মোতায়েন করাটা সরকারের আরেকটি বড় পদক্ষেপ।”
জাতিসংঘের উপদেষ্টা জাহিদ হক আরও বলেন, “বাংলাদেশে গত দু’দিন কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি। আজ (৩০ মার্চ) একজন মাত্র সনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসে মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকার ঘোষিত ১০ দিনের ছুটি যে কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এমন দৃশ্যপট থেকে তা বোঝা যাচ্ছে।”
জাহিদ হক বলেন, “আতঙ্কিত না হয়ে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার চালানো উচিৎ, এক্ষেত্রে বিএনসিসি ক্যাডেটস এবং রোভার স্কাউটদের ডাকা যেতে পারে।
আমাদের বার্তাটি হলো, আতঙ্কিত হবেন না, কারণ সবাই যদি সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করেন, তাহলে এটি একটি খুব সাধারণ রোগ।”
করোনাভাইরাস চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ রোগীকেও অন্য সাধারণ ফ্লু রোগীর মতো চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে, সবার কাছে অনুরোধ করছি, করোনাভাইরাস একটি ভাইরাল রোগ, তাই এর চিকিৎসায় কোন অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক ব্যবহার করবেন না।”
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “কোভিড-১৯ ভাইরাসটি পাঁচদিনের মধ্যে শরীরে বিকশিত (ডেভেলপ করে) হয়, এর লক্ষণগুলো দেখা দেয় সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা হলো, রোগীকে শুধুমাত্র আলাদা করে (আইসোলেটেড) রাখা।”
একজন স্বাস্থ্য পরামর্শক হিসেবে পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “করোনাভাইরাস কোন বায়ুবাহিত রোগ নয়। তবে, এটি সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি ও কফ এবং তাকে স্পর্শ করা মাধ্যমে ছড়ায়। কোভিড-১৯ ভাইরাস মাটিতে বেশ কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে, সাধারণ জীবাণুনাশক একে মেরে ফেলতে পারে।”
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিচার্চ (আইইডিসিআর) মতে, বাংলাদেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছে এবং ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ২৯,৮৫৭ জন মারা গেছে এবং প্রায় ৬৩৪,৮৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে।
মতামত দিন