‘পৃথিবীতে শুধু বাংলাদেশেই ২৫২টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে’
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে আরও ২১টি ডিম দিয়েছে মহাবিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ “বাটাগুর বাসকা”। ডিমগুলো বালুর নিচে রেখে প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফুঁটানোর চেষ্টা করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির একটি কচ্ছপ শুক্রবার ভোরে পুকুর পাড়ে স্তুপ করে রাখা বালুর মধ্যে একে একে ২১টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে হাঁসের ডিমের মতো। ডিম বালুর নিচে রেখে সার্বক্ষণিক তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ সাধারণত মার্চ মাসে ডিম দিয়ে থাকে। এখানে ২০টি থেকে সর্বোচ্চ ৩৫টি পর্যন্ত ডিম পেড়েছে কচ্ছপ। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ পর্যন্ত চারটি কচ্ছপ মোট ১৯৭টি ডিম দিয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই ডিম থেকে ১১০টি বাচ্চা ফুটেছে। ১৮ থেকে ২০ বছর হলে কচ্ছপ পূর্ণবয়স্ক হয় বলে ধরা হয়। আর পূর্ণবয়স্ক মাদি কচ্ছপ বছরে একবার ডিম পাড়ে।
আরও পড়ুন - সুন্দরবনে ৩৫টি ডিম দিয়েছে ‘বাটাগুর বাসকা’
আজাদ কবিরের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে প্রজনন কেন্দ্রে দু’টি কচ্ছপ ৬৩টি ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা ফুটেছে। ২০১৮ সালে দু’টি কচ্ছপ ৪৬টি ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা ফুটেছে। ২০১৯ সালে দু’টি কচ্ছপ ৩২টি ডিম পাড়লে সবকটি ডিম থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। আর চলতি বছরে দু’টি কচ্ছপে ৫৬টি ডিম পেড়েছে। ওই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা চলছে। সেখানে প্রজনন করতে সক্ষম চারটি মাদি এবং ১৪টি পুরুষ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন জানান, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে একসময় প্রচুর পরিমাণ বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে ওই প্রজাতির কচ্ছপের দেখা মেলে না। এই অবস্থায় ওই প্রজাতির কচ্ছপের বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্র জানতে গবেষণা শুরু করা হয়েছে।
তিনি জানান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে মোট ২৫২টি বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্ত্রী প্রজাতিসহ মোট ২৩টি প্রাপ্ত বয়স্ক। বাকিগুলো বিভিন্ন বয়সের পুরুষ প্রজাতির।
আরও পড়ুন - বনরুই পাচার ও বিলুপ্তি ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ কি যথাযথ?
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শিগগিরই সুন্দরবনের নদীতে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির ১০টি কচ্ছপ অবমুক্ত করা হবে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।
বাটাগুর বাসকা সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বাটাগুর বাসকা বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ। ২০০০ সালের দিকেও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করতেন কচ্ছপের এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশে বরিশাল-নোয়াখালীতে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। তারপর থেকেই প্রাণীটির বিলুপ্তি ঠেকাতে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবং সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ।”
তিনি বলেন, “এই কচ্ছপটি মাংসাশী। এটি ছোট উদ্ভিদ, শামুক, ক্রাস্টেশিয়ান, ছোট মাছ ও কেওড়া গাছের ফল খেয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। তাদের আয়ু ২০০ থেকে ৩০০ বছর। কিন্তু বাটাগুর বাসকার গড় আয়ু ৪০ বছরের মতো। প্রতিটি বাটাগুরের ওজন ১৮ থেকে ২০ কেজি হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শুধু বাংলাদেশে ২৫২টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে।”
আরও পড়ুন - ডিম পেড়েছে কালিম পাখি
মতামত দিন