অব্যবহৃত অবস্থায় সেতুগুলোর কোনোটি পড়ে আছে ৫ বছর, কোনোটি ৬ বছর আবার কোনোটি ২০ বছর ধরে
সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের একাধিক সেতু। সেতু থাকার পরেও বাঁশের সাকো বা বিকল্প পথে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। সেতুগুলো নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এসব সেতু কেবল সরকারের অর্থ অপচয়ই হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
অব্যবহৃত অবস্থায় এর কোনোটি পড়ে আছে ৫ বছর, কোনোটি ৬ বছর আবার কোনোটি ২০ বছর ধরে।
স্থানীয়রা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরকাশিম নগর বাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২৯ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৯ লাখ ৬১ হাজার ছয়শ সাত টাকা।
কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা। একই ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ভাওয়ালের চর গ্রামেও রয়েছে এমন একটি সেতু। আড়িয়াল খাঁ নদের এক পাড়ে খালি জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ২০ ফুট দীর্ঘ এই সেতুটিও নির্মাণ করেছে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫শ ৪৬ টাকা ব্যয়ে ঝোপঝাড় আবৃত একটি জায়গায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সেতুটিও জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। এটিতে ওঠা-নামার জন্যও কোনো সড়ক নেই।
সেতুর একপ্রান্তের গন্তব্য অজানা। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
ব্যবহার অনুপযোগী তৃতীয় সেতুটির অবস্থান দীঘলদীকান্দা স্লুইচ গেইট সংলগ্ন এলাকায়। মূল সড়ক থেকে বিছিন্ন থাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে এটি। নির্মাণের কিছুদিন পরই এটির পাশে একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। ফলে মূল সড়ক পরিবর্তন হয়ে স্লুইচ গেইটের ওপর দিয়ে আরেকটি পাকা সড়ক নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে সেতুটি।
এছাড়াও, বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদ সুতিঘাট খালের ওপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মিত সেতুটিও সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচলের অনুপযোগী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর উপজেলার বেশিরভাগ সেতুই অপরিকল্পিতভাবে ও অপ্রয়োজনীয় জায়গায় নির্মাণ করেছে। সেগুলো কোনো কাজেই আসছে না জনগণের। কোনো ধরনের জরিপ কিংবা বিশেষজ্ঞ দলের নকশা ছাড়াই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এসব সেতু ও কালভার্ট।
মাতুয়াকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ী আবু হানিফ ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক সাফিউদ্দীন জানান, সেতুগুলোর দুই পাশে কোনো মাটি বা সড়ক না থাকায় ৬ বছরেও তাদের এলাকার সেতু দিয়ে কেউ পারাপার হতে পারেননি।
অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা সেতুটির পাশে জন্মেছে ঝোপঝাড়। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুগুলোকে চলাচলের উপযোগী করে তোলার দাবি জানান তারা।
বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, সংযোগ সড়ক ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া, সেখানে আরও বড় সেতুর প্রয়োজন। আর ভাওয়ালের চরে যে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা জমি দেয়নি। আশা করছি এ সমস্যার সমাধান হবে।
যোগাযোগ করা হলে বেলাবো উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাছসুমা শাহ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। সেতুগুলো সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সংযোগ সড়ক তৈরি করা ছাড়া কিভাবে ঠিকাদাররা প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন সেটা আমারও বোধগম্য নয়। আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
মতামত দিন