একটি সজারু গর্ভবর্তী এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি বাচ্চা প্রসব করবে
মাদারীপুর থেকে দুটি মহাবিপন্ন সজারু উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যরা।
গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) জেলার শিবচর উপজেলা থেকে সজারু দুটি উদ্ধার করা হয়।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, পদ্মা সেতুর কাজে অনেক চীনা শ্রমিক রয়েছেন। চীনারা সজারু খায় এমনটি জেনে স্থানীয় এক যুবক সজারু দুটিকে বিক্রির উদ্দেশে চীনা শ্রমিকদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা বাধা দেন এবং বন বিভাগকে খবর দেন। পরে মাদারীপুর সামাজিক বন বিভাগের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সজারু দুটি উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পরদিন (৫ জানুয়ারি) বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যরা শিবচরে গিয়ে সজারু দুটি ঢাকা নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, দেশের বেশিরভাগ এলাকা থেকেই সজারু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ সময়ে মাদারীপুর এলাকায় সজারু রয়েছে নাকি কোথায়ও থেকে তা আনা হয়েছে তা জানতে জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - ঘরের ভেতর বসেছিল মেছো বাঘ
জহির আকন বলেন, “যে যুবকের কাছ থেকে সজারু উদ্ধার করা হয়েছে, আমরা তার কাছ থেকে সজারুর উৎস জানার চেষ্টা করছি। এটি যে এলাকা থেকে আনা হয়েছে সেই এলাকায় নিশ্চয় আরও সজারু আছে।”
দুটি সজারুই সুস্থ রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “অল্প কিছুসংখ্যক সজারু লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে টিকে রয়েছে। তাই সজারু দুটিকে ওই বনেই অবমুক্ত করা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মজার বিষয় হচ্ছে একটি সজারু গর্ভবর্তী এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি বাচ্চা প্রসব করবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “দেশে সজারুর যে প্রজাতিটি পাওয়া যায় তার ইংরেজি নাম Indian Crested Porcupine। এক সময় প্রায় সর্বত্রই সজারু দেখা যেতো। বর্তমানে চিরসবুজ পাহাড়ি বন ও সুন্দরবনে কিছু সজারু টিকে আছে। নিশাচর এই প্রাণীটি মূলত শাকসবজি, লতাপাতা, ফলমূল ও দানাশস্য খায়। বছরে বাচ্চা দেয় ২-৪টি। তবে ব্যাপক নিধন ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে এটি বিপন্ন হয়েছে পড়েছে।”
আরও পড়ুন - মৌলভীবাজারে ‘আদালত’ বসিয়ে বানর হত্যা!
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এটিকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই প্রাণীটি হত্যা, শিকার বা কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
মতামত দিন