দর্শনার্থীদের জন্য জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ও বিশ্বদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে মশারির ঘর তৈরি করে তাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জীবন্ত প্রজাপতি
সাদা জাল দিয়ে ঘেরা প্রদর্শনী ঘরের মধ্যে কিছু ফুলের গাছ। আর রঙিন পাখায় ভর করে গাছের পাতায় ও ফুলে উড়ে উড়ে খেলা করছে নানা রঙ-প্রজাতির প্রজাপতি। প্রজাপতির দৃষ্টিনন্দন রঙ আর মনোমুগ্ধকর খেলা বাইরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রজাপতির রঙিন পাখার উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে ব্যস্ত। বলছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত প্রজাপতি মেলার কথা।
রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে সকাল থেকেই হাজারো প্রজাপতিপ্রেমীরা এসে ভিড় জমিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এসব দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর উঠেছে ক্যাম্পাস। আগত এসব দর্শনার্থীদের জন্য জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ও বিশ্বদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে মশারির ঘর তৈরি করে তাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জীবন্ত প্রজাপতি। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং উপভোগ করছে রঙ-বেরংয়ের প্রজাপতি। এদিকে মেলা উপলক্ষে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের রাস্তা জুড়ে বসেছিল পাখি-প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল।
ঢাকার মিরপুর থেকে মা-বাবার সঙ্গে প্রজাপতি মেলা দেখতে আসা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মনিকা জাহান বলেন, “প্রজাপতি মেলা দেখতে এসেছি। অনেক রঙের প্রজাপতি দেখেছি। আমার খুব আনন্দ লাগছে।”
মনিকা জাহানের বাবা হাসানুজ্জামান বলেন, “একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কাজের চাপে তেমন কোথাও যেতে পারি না। আজ ছুটির দিনে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে এমন সুন্দর পরিবেশে প্রজাপতি মেলা দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।”
প্রজাপতির প্রতি বড়দের আগ্রহেরও কমতি ছিল না। ঢাকা ট্রিবিউন
“উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতি বছরের ন্যায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে দশম বারের মতো এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করার কথা থাকলেও তিনি না আসায় শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার হাওলাদার।
উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “প্রজাপতি একটি অসাধারণ পতঙ্গ। এই পতঙ্গটি শুধুমাত্র প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়তা করে না, এটি প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই এই উপকারী প্রাণীটির সংরক্ষণে আমাদের সকলের কাজ করা উচিৎ।”
আরও পড়ুন - জাবিতে চলছে প্রজাপতি মেলা
প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, “প্রজাপতিকে চিনলে প্রজাপতিকে সংরক্ষণ করলে প্রকৃতি টিকে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের যে সমস্যাগুলো আছে তা আমরা মোকাবিলা করতে পারবো।”
প্রজাপতি সংরক্ষণে সবাইকে আহ্বান করে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিলো যা এখন দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব প্রজাপতিকে সংরক্ষণের জন্য এই উপকারী প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। কারণ প্রজাপতি না থাকলে পরিবেশ ধ্বংস হবে আর পরিবেশ ঠিক না থাকলে আমরা সুস্থভাবে বেচে থাকতে পারবো না।”
বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে মেলার উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা ট্রিবিউন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ বাশার বলেন, “প্রজাপতি হলো একটি অসাধারণ প্রাণী। এই প্রাণীটি প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে এত বেশি জড়িত অন্য কোনো প্রাণী এত বেশি জড়িত আছে কি না আমার জানা নেই। মানুষের সুস্থতা পরিবেশের সাথে সম্পর্ক আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রজাতির ভূমিকা সর্বোচ্চ। আমরা প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে হলে চোখ থাকলে হবে না দৃষ্টি থাকতে হবে।”
প্রজাপতির গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য এবারের প্রজাপতি মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ বাশার কে “বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৯” ও সবুজবাগ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অরুণাভ ব্রুণো কে “বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট” অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারের মেলায়ও বর্ণাঢ্য র্যালি, প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁক, কুইজ প্রতিযোগিতা (শিশু কিশোরদের জন্য), প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগীতা, পুরষকার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতির গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রজাপতি মেলার আয়োজন করে আসছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ।
মতামত দিন