“উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান” নামক পুস্তিকার ভূমিকা পাঠকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য ও চিত্র তুলে ধরা হয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের “দুর্নীতির খতিয়ান” (তথ্য) প্রকাশ করেছেন আন্দোলরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর” বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে ২২৪ পৃষ্ঠার “দুর্নীতির খতিয়ান” (তথ্য) পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেন তারা।
“উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান” শীর্ষক ২২৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মধ্যস্থতায় তার বাসভবনে শাখা ছাত্রলীগকে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দুই কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা, ছাত্রলীগ নেতাদের টাকা পাওয়ার স্বীকারোক্তি, ই-টেন্ডার না করে ম্যানুয়াল টেন্ডার আহ্বান করা, নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি কোম্পানির টেন্ডার সিডিউল ছিনতাই করানো, অভিযোগের পরও সে ঘটনার তদন্ত না করা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএস) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের তদারক কমিটিতে রাখা, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের টর (টার্মস অব রেফারেন্স) এবং মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নেওয়া, যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না করা ইত্যাদি বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য এই বইতে প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় “দর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর” এর মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের যে দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ করেছি তা একটি অসম্পূর্ণ খতিয়ান। কারণ এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়গুলো যোগ করা হয়নি। এছাড়া সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত আবাসিক হল ফাউন্ডেশনের যে দুর্নীতির খবর আমরা জানতে পেরেছি তা পরবর্তী সংস্করণে যোগ করা হবে।”
“উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান” নামক পুস্তিকার ভূমিকা পাঠকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য ও চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয় জাতির দর্পণ হিসেবে কাজ করে কিন্তু সেখানে যদি দুর্নীতির বিষয় জড়িয়ে থাকে তাহলে জাতি কিভাবে অগ্রসর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মাস্টার প্লানের মতো মহাপরিকল্পনাকে কলঙ্কিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাকে কলঙ্কিত করেছেন এই উপাচার্য। এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র, সরকারকিংবা উপাচার্য নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সঙ্গত কারণেই উপাচার্য যে দুর্নীতির সাথে জড়িত তা নিশ্চিত।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ “দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহার” পাঠকালে বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কোনো উপাচার্য পতন আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম না বরং উপাচার্যের অপসারণ আন্দোলনের একটি বিশেষ স্তরের মধ্যে থেকে উঠে আসা সর্বাত্মক কর্মসূচি মাত্র। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের চুপ থাকা, ছাত্রলীগের একাধিক নেতার স্বীকারোক্তি, মাস্টারপ্ল্যানে দুর্নীতি সর্বোপরি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপরে এমন ন্যক্কারজনক হামলা সংগঠিত করার পর উপাচার্য আর কোনোভাবেই তার পদে থাকতে পারেন না। আন্দোলনের বর্তমান এক দফা দাবি হলো দুর্নীতিগ্রস্থ উপাচার্যের অপসারণ।”
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক নাজমুল তালুকদার, পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইনামুল হক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক শাকিলউজ্জামান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কতৃক ১৪৪৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি নতুন আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ শুরুর একেবারে প্রথম দিকে এই বরাদ্দকৃত টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটিসহ মোট দুই কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মতামত দিন