‘ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ জেন্ডার ভিত্তিক বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে শব্দ চয়নে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। ধর্ষণ ও সম্মান দুটো আলাদা বিষয়’
ধর্ষণ নারীর সম্মানহানি করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. হামিদা হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আয়োজিত মানবাধিকার কর্মী সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে “আস্থা” প্রকল্পের জার্নালিস্ট ফেলোশিপ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীর সম্মানের প্রসঙ্গ কেন টেনে আনা হয়, এমন প্রশ্ন তুলে ড. হামিদা হোসেন বলেন, “ধর্ষণ নারীর সম্মানহানি করতে পারে না।”
অনুষ্ঠানে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, “ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ জেন্ডার ভিত্তিক বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে শব্দ চয়নে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। ধর্ষণ ও সম্মান দু’টো আলাদা বিষয়।”
এর আগে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. হামিদা হোসেন, ইউএনএফপিএ-এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. ইকো নারিতা এবং দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র ডেপুটি এডিটর আশা মেহরিন আমিনে হাত থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এনটিভির সিনিয়র প্রতিনিধি আ স ম আতিকুর রহমান, ডেইলি অবজারভারের স্টাফ রিপোর্টার বনানী মল্লিক, ঢাকা ট্রিবিউনের সাব-এডিটর আবু কালাম আজাদ, দৈনিক সমকালের সাব-এডিটর জাহিদুর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের স্টাফ রিপোর্টার মো. কামরুল হাসান, বিডিনিউজ২৪ ডটকমের অ্যাসিস্টেন্ট ফিচার এডিটর সাইয়েদা ফারজানা জামান রুম্পা, ডেইলি স্টারের রির্পোটার নিলীমা জাহান, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মো. শারফুল আলম এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনিয়র রির্পোটার মো. সফিউল্লাহ সুমন।
আরও পড়ুন - আসকের ‘আস্থা’ প্রকল্পের উদ্যোগে ‘জার্নালিস্ট ফেলোশিপ’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে “আস্থা” প্রকল্পের সাংবাদিক ফেলোশিপ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ১৭ জন নির্বাচিত সাংবাদিক অংশ নেন। দু’দিনব্যাপী একটি কর্মশালার মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীলভাবে প্রতিবেদন লেখা ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার নানা দিক নিয়ে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমকর্মীরা “আস্থা”র বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় মাঠপর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহ ও অভিজ্ঞতা অর্জনে দুই দিনের সফরে যান। তারা নির্যাতনের শিকার নারী, কন্যা শিশু, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন এবং একইসাথে “আস্থা” প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা মাঠপর্যায় হতে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতাকেন্দ্রিক তথ্য, সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করে সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এসব প্রতিবেদনে জেন্ডারবৈষম্য, পারিবারিকসহিংসতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, শিশুধর্ষণ, বৈবাহিক ধর্ষণ, সাইবার ক্ষেত্রে যৌনহয়রানি, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে পুরুষের সম্পৃক্ততা, ধর্ষণ আইনের প্রয়োজনীয়তা, নির্যাতনের বিষয়ে সারভাইভারের রিপোর্ট না করার পেছনে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, সহিংসতা প্রতিরোধে মাল্টি-সেক্টরাল সেবাসমূহ, গণমাধ্যমে নারীর রূপ ইত্যাদি উঠে আসে।
জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধে ইউএনএফপিএ-এ কারিগরি ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় জামালপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া এবং কক্সবাজারের ১২টি উপজেলায় “আস্থা”নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে আসক। এই প্রকল্পে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা শিকার নারীদের প্রয়োজনের সময় বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে সহযোগিতা করা হয়। আর সে জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে আস্থা প্রকল্পের কেসওয়ার্কাররা। প্রকল্প এলাকার থানা ও আদালতে অবস্থিত নারী সহায়তাকেন্দ্রের মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও সারভাইভারের গোপনীয়তা মেনে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হয়।
মতামত দিন