• মঙ্গলবার, মার্চ ২১, ২০২৩
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৮:০৮ সকাল

দর্শনার্থীদের ভিড়ে উত্যক্ত জাবির অতিথিরা

  • প্রকাশিত ০১:৩০ দুপুর নভেম্বর ৩০, ২০১৯
জাবি
বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ পাখিময় করে রাখে অতিথিরা। ঢাকা ট্রিবিউন

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে পাখিদের উত্যক্ত করা থেকে বহিরাগত দর্শনার্থীদের বিরত রাখেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেই সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা 

ঘন সবুজ গাছপালায় আবৃত বন্ধুর ও সমতল ভূমিতে রাজধানীর অদূরেই অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই ক্যাম্পাসটি অপরূপ সৌন্দর্যের নগরী, নৈসর্গের অন্য নাম। 

ঋতুর পালাবদলে শীতের আগমনে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি হয়ে ওঠে আরও সুন্দর ও মায়াবী। সবুজ গাছপালা আর উঁচু নিচু ভূমির বুকে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি জলাশয়। এর মধ্যে ১৩টি জলাশয়ে রক্তকোমল লাল শাপলার দেখা মেলে। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই লাল শাপলার জলাশয়ের বুকে নিজেদের অস্থায়ী আবাস গাড়ে হাজার মাইল উত্তর থেকে ছুটে আসা পরিযায়ী পাখিরা। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। দিনভর লেকের জলে চলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো আর জলকেলি। পুরোটা সময় তাদের খুঁনসুটি আর ছোটাছুটি মাতিয়ে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতি বছর নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে আসে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। তবে এ বছর শীত শুরু হতে না হতেই, অক্টোবরের শেষের দিকে বিপুলসংখ্যক অতিথি পাখি আশ্রয় নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

চলতি বছর শীত আসার আগেই এসেছে পাখিরা। ঢাকা ট্রিবিউন

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে এ বছর আগেভাগেই দক্ষিণে দিকে পাড়ি জমিয়েছে এসব পাখি। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পাখিদের আসা অব্যাহত থাকবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই অতিথিরা ফিরতে শুরু করবে তাদের আপন নীড়ে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যাও বেড়েছে।

হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা এসব অতিথিদের দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাখিদের ডানা ঝাঁপটানো, জলকেলি, খুঁনসুটি কিংবা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানোর ছবি ধারণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢিল ছুঁড়ছেন অনেক দর্শনার্থী। তবে দর্শনার্থীদের এই কাজে বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই। সব কিছু দেখেও যেন নির্বিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর অতিথিদের এমন দূরাবস্থার কারণ- চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে পাখিদের উত্যক্ত করা থেকে বহিরাগত দর্শনার্থীদের বিরত রাখেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেই সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা।


আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?


প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হল ও পরিবহন চত্বরের মাঝামাঝি, পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জয়াপাড়া জলাশয়ে নিজেদের আবাস গড়ে নেয় পরিযায়ী পাখিরা। এই তিনটি লেককে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। আর এসব জলাশয়গুলোতেই দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমাচ্ছে। তাদের ভিড় আর গাড়ির শব্দে অতিষ্ঠ পাখিরা। 

প্রতিবছরের তুলনায় এবারে আসা পাখির সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকা ট্রিবিউন 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে ১৯৮৬ সাল থেকে অতিথি পাখি আসছে। আগে দেশি-বিদেশি মিলে ১৯০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত এখানে। এগুলোর মধ্যে ১২০টি দেশি ও ৭০টি বিদেশি প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে ছোট সরালি, চিতা টুপি, বড় সরালি, গার্গিনি, বামুনিয়া, হাঁসপাখি, মুরহেন, খঞ্জনা, নর্দান, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জল পিপি, কলাই, শামুক ভাঙ্গা, লেসার হুইসেল, নাকতা, মানিকজোড় ও ভিনদেশি বকসহ আরো নাম না জানা হরেক প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা খুবই কম। এখন ক্যাম্পাসে সাত থেকে আট প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে।

ক্যাম্পাসের পরিবেশবাদী সংগঠন “সেভ দ্য ন্যাচার”-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আজিম (সৈকত) বলেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার তুলনামূলক বেশি পাখি এসেছে এটা আমাদের জন্য আনন্দের খবর। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমরা এই আনন্দটা উপভোগ করতে পারছি না। শুধুমাত্র বহিরাগত দর্শনার্থীরাই অতিথিদের কলকাকলি ও জলকেলি উপভোগ করছে। তবে এ সৌন্দর্য রক্ষার্থে প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে জলাশয়গুলো পরিষ্কার করলে এবং দর্শনার্থীরা যাতে পাখিদের বিরক্ত না করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে অতিথিরা অবাধে বিচরণ করতে পারবে।”    


আরও পড়ুন - শকুন সংরক্ষণে বাংলাদেশ, কী করছে সরকার?


পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, “এ বছর পাখি বেশি আসছে বলতে পরিবহন চত্বরের পাশে ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক দুটোতেই বেশি আসছে। প্রতিবছর যেটা হয় এখানে দর্শানার্থীদের ভিড় বেশি থাকার কারণে কোলাহল বেশি থাকে এখানে খুব একটা পাখি বসে না। এবার যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ সে কারণে তাদের বিরক্তি নাই। এ কারণে লেকদুটিতে বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে ইদানিং দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে ফলে এখান থেকে অনেক পাখি উঠে দক্ষিণ দিকে যেসব লেক আছে সেদিকে চলে যাচ্ছে।”

বহিরাগত দর্শনার্থীরা পাখিদের বিরক্ত করলেও বাধা দেওয়ার কেউ নেই সেখানে। ঢাকা ট্রিবিউন

তিনি আরও বলেন, “প্রশাসন থেকে কিছু বিলবোর্ড লাগিয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার নতুন করে লাগোনোর জন্য আমাদের সাথে যোগযোগ করছে। দর্শনার্থী যারা আছে তাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমরা পাখি মেলাতে বিলবোর্ড দিয়ে বিভিন্নভাবে সচেতন করার চেষ্টাটা করি। এছাড়া এই সময়টাতে লেকের আশেপাশে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে তাদেরকে বিশেষভাবে বলা থাকে যাতে পাখিকে কেউ বিরক্ত না করে। পাখির নিরাপত্তায় যারই সামনে পড়বে এ ধরনের কাজ তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। সচেতনতা যদি গড়ে ওঠে তাহলে বাইরে থেকে কেউ এসে পাখিদের বিরক্ত করতে পারবে না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “অতিথি পাখিদের কেউ যেন উত্যক্ত না করে সেদিকে আমরা সতর্কমূলক দৃষ্টি রাখি। আমরা মূলত পাখিদেরকে নিরুপদ্রব রাখার চেষ্টা করি। তাছাড়া জনসচেতনতামূলক নির্দেশিকা তো টানানো আছেই। আর এখন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে পাখিদের দেখাশোনা করার জন্য একটা কমিটি আছে। এছাড়া আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে নজর রাখে।”

50
Facebook 50
blogger sharing button blogger
buffer sharing button buffer
diaspora sharing button diaspora
digg sharing button digg
douban sharing button douban
email sharing button email
evernote sharing button evernote
flipboard sharing button flipboard
pocket sharing button getpocket
github sharing button github
gmail sharing button gmail
googlebookmarks sharing button googlebookmarks
hackernews sharing button hackernews
instapaper sharing button instapaper
line sharing button line
linkedin sharing button linkedin
livejournal sharing button livejournal
mailru sharing button mailru
medium sharing button medium
meneame sharing button meneame
messenger sharing button messenger
odnoklassniki sharing button odnoklassniki
pinterest sharing button pinterest
print sharing button print
qzone sharing button qzone
reddit sharing button reddit
refind sharing button refind
renren sharing button renren
skype sharing button skype
snapchat sharing button snapchat
surfingbird sharing button surfingbird
telegram sharing button telegram
tumblr sharing button tumblr
twitter sharing button twitter
vk sharing button vk
wechat sharing button wechat
weibo sharing button weibo
whatsapp sharing button whatsapp
wordpress sharing button wordpress
xing sharing button xing
yahoomail sharing button yahoomail