সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত পা বেঁধে মারধর ও তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করছে
কুষ্টিয়ার মিরপুরে কামরুজ্জামান ইমন আলী নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর মিরপুরের সমর্পণ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইমনের মৃত্যু হয়েছিল। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই ইমনে দাফন করে তার পরিবার।
নিহত ইমন মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
তবে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ফাঁস হওয়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত পা বেঁধে মারধর ও তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করছে। মুহুর্তে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
নিহত ইমনের বাবা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। তবে সে বিভিন্ন সময় বাড়িতে ঝামেলা করতো। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল, একথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা বলেছিল, কয়েকদিন পর আসেন ভর্তি করে নেওয়া যাবে। বাড়িতে ফিরে এসে ইমন খুব ঝামেলা সৃষ্টি করে। ওইদিন সবাই আমাকে বলে, ইমনকে কোথাও রেখে আসতে। তখন আমি কোনো কিছু না ভেবেই ১৯ নভেম্বর পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত “সমর্পণ” নামের একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করি। তারপর ২০ নভেম্বর সকালে খবর পাই ইমন মারা গেছে।
মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে না নিয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কোনো রাখলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কেঁদে দেন এজাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কি থেকে কি হয়ে গেলো, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
ইমনের মা কামরুন্নাহার বলেন, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়েছে।
ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, আমরা কখনোই ইমনকে নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন আগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল সে। বিষয়টি বুঝতে পারে ইমনের পরিবার। তারপর ইমনের বাবা ইমনকে ডাক্তারও দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ঘুম কম হওয়ায় এমন সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে অভিযোগ ওঠা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও প্রকাশিত ভিডিওতে নির্যাতনের সাথে জড়িত রুবেল নামে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়।
তিনি জানান, “উশৃঙ্খলতা ঠেকাতে হাত বেঁধে চড় থাপ্পড় মারা হয় ইমনকে।”
সমর্পণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিনের দাবি, “নির্যাতনে নয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় মারা যায় ইমন।”
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম।
মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ফারাজি বলেন, “ইমনের শরীরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।”
মতামত দিন