‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার দুর্নীতির প্রমাণ চাচ্ছে। জনগণের কাজ হচ্ছে প্রশ্ন তোলা, দুর্বলতা চিহ্নিত করে দেওয়া। ঘটনার গভীরে গিয়ে অনুসন্ধানের কাজ সরকারের’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, “রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান ব্যক্তি সরকার প্রধানের কাছ থেকে যখন প্রত্যেকে বিষয়ে রিঅ্যাকশন শুনি তখন খুব অবাক হই। এর মাধমে পরিষ্কার হয়- রাষ্ট্রের কোনও প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। যদি করতে পারতো তবে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, কুপিয়ে মারার ঘটনা কিংবা নৈতিক স্খলন ঘটা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হতো না।”
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংহতি সমাবেশে এ কথা বলেন নুর। ওই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, অ্যাক্টিভিস্টরা উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
ভিপি নুর তার বক্তব্যে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুপ্রিম জায়গা, সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। যখন কোনও প্রশাসন কাজ করবে না তখন হয়তো তার হস্তক্ষেপ করা লাগে।”
আরও পড়ুন - পটচিত্রে জাবি উপাচার্যের অপসারণ দাবি
তিনি আরও বলেন “নিজের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঠেকাতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে সুরাহা করতে পারেননি। উপাচার্যের বিভিন্ন বক্তব্যে দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকান্তরে যখন তার পক্ষে সাফাই গায় তখন আমরা অবাক হই।”
তিনি বলেন, “উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার দুর্নীতির প্রমাণ চাচ্ছে। জনগণের কাজ হচ্ছে প্রশ্ন তোলা, দুর্বলতা চিহ্নিত করে দেওয়া। ঘটনার গভীরে গিয়ে অনুসন্ধানের কাজ সরকারের।”
তিনি আরও বলেন, “যখন একজন দুর্নীতিবাজ, নৈতিক স্খলন ঘটা ভিসির অপসারণ আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর একদল শিক্ষকের ইন্ধনেহামলা হয় তখন তা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জ্বার।”
আরও পড়ুন - প্রধানমন্ত্রী: জাবি ভিসি’র দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পারলে ব্যবস্থা
তিনি আরও বলেন, “যখনই কোনও আন্দোলন-সংগ্রাম হয় তখন সরকারবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামাতের ইন্ধনের আন্দোলন বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। আমরা যদি সরকারবিরোধী আন্দোলন করতাম, তাহলে আপনারা যেদিন ভোট ছাড়াই জোর করে ক্ষমতায় এসেছিলেন তার পরদিনই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। আমরা কিন্তু সেটি করিনি। আমাদের করা উচিৎ ছিল নৈতিক জায়গা থেকে, আমরা সেটিও করিনি।”
ভিপি নুর বলেন, “যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা করা ছাত্রলীগের চরিত্র। তা শুধু জাহাঙ্গীরনগরেই নয়, সারা বাংলাদেশেই ঘটেছে। ডাকসুর ভিপি হয়েও বারবার ছাত্রলীগের দ্বারা আক্রান্ত হযেছি, হামলার শিকার হয়েছি। শিক্ষা উপমন্ত্রী খুবই বিবেকহীনভাবে বলেছেন, ছাত্রলীগকে অনেকে বাড়িয়ে তুলে ধরে। এটা আমাদের জন্য লজ্জ্বাজনক।”
তিনি বলেন, “দেশে যে দুঃশাসন, নির্যাতন, ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চলছে সেসবের বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন আন্দোলন। সরকারের নৈতিক ভিত্তি নাই। তাই মানুষের প্রতিবাদকে ভয় পায়।”
আরও পড়ুন - জাবিতে দু'দিন বন্ধের পর আবারও শুরু আন্দোলন
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুইদিন আন্দোলন স্থগিতের পর উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আজ মঙ্গলবার থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয়েছে।
মতামত দিন