'একজন জুনিয়র শিক্ষক আরেকজন সিনিয়র শিক্ষককে ধমকাতে দেখি-সে কেন মারধর করছে না'
দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস।
অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস আন্দোলনরত "দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর" মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র ও সংগঠক। গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ছাত্রলীগের হামলায় তিনি আহত হন।
সাঈদ ফেরদৌস ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, "ছাত্রলীগ আন্দোলনরতদের মারতে এলে আমার উপাচার্যপন্থী সহকর্মীরা হাত তালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়, উৎসাহ দেয়। আমি তখন আবেগতাড়িত হয়ে যাই। এই দেশে এমনই হওয়ার কথা। এখানে এটাও সম্ভব যে, শিক্ষকরা অন্য শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে ছাত্র-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। আমি কারও কাছে কোনো নালিশ দিব না, দিতে চাই না।"
হামলার বর্ণনায় অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, "দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় তার বাসভবন অবরোধ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে আমরা বাসভবনের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বসে অবস্থান করছিলাম। উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি দল আমাদের মাড়িয়ে যেতে চায়।"
এরপর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ সেখানে গেলে দৃশ্যপট পাল্টে যায় বলে জানান অধ্যাপক সাঈদ। তিনি বলেন, "ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এসে আমাদেরকে টপকে একে-ওকে শিবির বলে তুলে নিয়ে যেতে চায়। অনেককেই টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে মারধর করে। আমরা বাধা দিতে চাই। এসময় দেখি কয়েকজন আমার পা ধরে টানছে। একপর্যায়ে আমাকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে বের করলো। একসময় দুজন ছাত্র ও একজন কর্মচারী আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়।"
তিনি আরও বলেন, "হামলার সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা 'ধর ধর', 'মার মার' স্লোগান দেয়। একজন জুনিয়র শিক্ষক আরেকজন সিনিয়র শিক্ষককে ধমকাতে দেখি-সে কেন মারধর করছে না। আমি তাদের নাম বলতে চাই না।"
অধ্যাপক সাঈদ আক্ষেপ করে বলেন, "এই সমাজ, রাষ্ট্র এমন জায়গায় পৌছেছে যেখানে কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না। কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। ব্যক্তিগত সম্মান, মূল্যবোধ কাজ করছে না। সবকিছু দলীয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।"
মতামত দিন