৪৩তম ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে একই বিভাগের ৪২তম ব্যাচের মো. তোজাম্মেল হোসেনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম হতে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে
শারীরিক নির্যাতন, মুক্তিপণ দাবি, যৌন হয়রানি ও র্যাগিংয়ের পৃথক ছয় ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই ছাত্রীসহ মোট ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের মধ্যে দু’জনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় ১৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত পাঁচটি পৃথক অফিস আদেশ জারি হয়। র্যাগিংয়ের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের অপর একটি অফিস আদেশ জারি হয় গত ২৬ জুলাই।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে অফিস আদেশগুলো প্রকাশ্যে আসে।
জনসংযোগ অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ সুমন বলেন, “অফিস আদেশগুলো আজ আমাদের অফিসে এসে পৌঁছে। আমরা আজই সেগুলো ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করি।”
অফিস আদেশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িচালক মো. আলমগীর হোসেনের জামাতা মনির হোসেন সরদারকে শারীরিক নির্যাতন ও আটকে রেখে পরিবারের কাছে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল যাত্রী ছাউনি হতে মনির হোসেন সরদারকে বোটনিক্যাল গার্ডেনে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বহিষ্কৃতরা। এ ঘটনায় দুই বছর মেয়াদে বহিষ্কৃতরা হলেন- ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের রায়হান পাটোয়ারি, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মো. আল রাজী, দর্শন বিভাগের মো. মোকাররম হোসেন শিবলু ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত। এরা সবাই ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সঞ্জয় ঘোষকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকায় এক বহিরাগত ও চ্যানেল আই অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহমুদুল হক সোহাগকে মারধরের ঘটনায় পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম ব্যাচের নেজাম উদ্দিন নিলয়, বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শুভাশীষ ঘোষ, এবং লোক প্রশাসন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ইয়া রাফিউ শিকদার, মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. সোহেল রানা।
ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ-২০১৮ এর ৬(ঘ) ধারা লংঘন করায় চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিনিধি জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হক সোহাগকে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গণিত বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে একই বিভাগের ৪২তম ব্যাচের মো. তোজাম্মেল হোসেনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম হতে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর চারুকলা বিভাগের এক ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৪৪তম ব্যাচের দুই ছাত্রকে এক বছর ও দুই ছাত্রীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- আশিকুর রহমান, সৌরভ চক্রবর্তী (অর্থো), জাকিয়া সুলতানা দিনা ও ফাহমিদা খানম অদিতি ছয় মাস।
গত ০৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্রী ও দুই ছাত্রকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার অভিযোগে ৪৭তম ব্যাচের দুই ছাত্রকে বহিষ্কার ও জরিমানা করা হয়েছে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রিজওয়ান রাশেদ সোয়ানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কে. এম. মাহিদ হাসানকে ছয়মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই ঘটনা তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মার্কেটিং বিভাগের আহসানুজ্জামান শাওনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে র্যাগিংয়ের অভিযোগে মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. শিহাবকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মতামত দিন